ক্যান্টারবেরির প্রাক্তন আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিরিয়াল যৌন নিপীড়ক জন স্মিথকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এই ঘটনা ২০১৯ সালে চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রধানের পদ থেকে তার পদত্যাগের কারণ হয়।
স্মিথ ছিলেন একজন প্রভাবশালী আইনজীবী, যিনি ২০১৮ সালে মারা যান এবং প্রায় ১৩০ জন বালকের উপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
ওয়েলবি’র পদত্যাগের কারণ অনুসন্ধানে একটি স্বাধীন তদন্ত হয়। এই তদন্তে উঠে আসে, স্মিথের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ওয়েলবির আরও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।
বিবিসির সাংবাদিক লরা কুয়েন্সবার্গের সঙ্গে আলাপকালে ওয়েলবি বলেন, “হ্যাঁ, আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। যদি তিনি জীবিত থাকতেন এবং আমি তাকে দেখতাম, তবে আমার মনে হয় না তিনি আমাকে নির্যাতন করেছেন। তিনি তো নির্যাতন করেছেন ভুক্তভোগী এবং তাদের স্বজনদের। তাই আমি ক্ষমা করলাম কিনা, সেটা সম্ভবত খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ওয়েলবির এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় স্মিথের নির্যাতনের শিকার এক ব্যক্তি কুয়েন্সবার্গকে জানান, “আমি ১৩ বছর আগে মুখ খুলেছিলাম। গির্জার লোকেরা আমাকে যে কষ্টের মধ্যে ফেলেছে, তার তুলনায় অতীতের নির্যাতন কিছুই না। সত্য জানতে চাওয়ার এই যাত্রা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর।
স্বাধীন তদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়েলবি যদি এক দশক আগে পুলিশের কাছে স্মিথের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেন, তাহলে হয়তো তাকে বিচারের আওতায় আনা যেত। এই বিষয়ে ওয়েলবি প্রথমে পদত্যাগ করতে রাজি ছিলেন না।
কিন্তু পরে তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
সাক্ষাৎকারে ওয়েলবি আরও জানান, হাউস অফ লর্ডসে বিদায়ী ভাষণে তিনি ১৪ শতকের শিরশ্ছেদের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যা শুনে অনেকে হেসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যদি কারও প্রতি সহানুভূতি দেখানোর প্রয়োজন হয়, তবে তার ডায়েরি সেক্রেটারিকে দেখানো উচিত, যিনি তার কয়েক সপ্তাহের কাজ ‘পদত্যাগের ঘোষণার ধোঁয়ায়’ উড়ে যেতে দেখেছেন।
এই বক্তব্য ভুক্তভোগী এবং অন্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ওয়েলবি স্বীকার করেন, সেই সময়ে তিনি ভালো অবস্থায় ছিলেন না এবং তার ওই ধরনের কথা বলা উচিত হয়নি। তিনি এর জন্য অনুতপ্ত এবং গভীরভাবে লজ্জিত।
ওয়েলবি আরও জানান, চার্চে নির্যাতনের ঘটনাগুলো তার কাছে “অত্যন্ত বেশি” মনে হয়েছিল। প্রতিদিন তিনি এমন অনেক ঘটনার কথা জানতে পারছিলেন, যেগুলোর যথাযথ প্রতিকার হয়নি।
তার উপর স্মিথের ঘটনাটিও ছিল একটি “অত্যন্ত কঠিন” পরিস্থিতি।
স্মিথের নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি জানতে চান, কেন ওয়েলবির কাছে এই ঘটনাটি অগ্রাধিকার পায়নি।
তিনি বলেন, “অন্যান্য অনেক ঘটনার ভিড়ে হয়তো আপনি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন, তবে যদি এই ঘটনাটি তালিকার শীর্ষে না থাকে, তাহলে আর কোন ঘটনা ছিল?”
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান