একটি নতুন অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র বানাচ্ছেন অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা মিশেল হাজানাভিসিউস। ছবির বিষয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সংঘটিত হলোকস্ট। ছবিটির নাম ‘দ্য মোস্ট প্রেশাস অফ কার্গোজ’। মূলত হলোকস্টের প্রেক্ষাপটে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ছবিতে।
সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছে এবং ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ফ্রান্সের এই খ্যাতিমান পরিচালক শুরুতে হলোকস্টের মতো স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে ছবি বানাতে দ্বিধা বোধ করেছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন পূর্ব ইউরোপের অভিবাসী, যাঁরা ১৯২০-এর দশকে লিথুয়ানিয়া এবং পোল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে এসেছিলেন। হাজানাভিসিউস মনে করতেন, এই গল্প তাঁর বলার কথা নয়, বরং তাঁর পরিবারের পূর্বসূরিদের।
কিন্তু পরে স্ত্রী বেরেনিস বেজোর-এর অনুপ্রেরণায় তিনি এই কাজটি করতে রাজি হন। তাঁর স্ত্রী তাঁকে বোঝান, পরিবারের ইহুদি ঐতিহ্য সম্পর্কে তিনি তাঁর সন্তানদের যথেষ্ট কিছু জানাননি, এবং ছবিটির মাধ্যমে অন্যদের সন্তানদেরও এই বিষয়ে অবগত করা যেতে পারে।
ছবিটি একটি রূপকথা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। গল্পের শুরুটা হয়, ‘একদা এককালে…’ বাক্যটি দিয়ে।
ছবিতে কোনো চরিত্রের নাম ব্যবহার করা হয়নি, যা গল্পটিকে আরও সার্বজনীন করে তোলে।
ছবির গল্পে দেখা যায়, এক কাঠুরের স্ত্রী তুষারে ঢাকা রাস্তা থেকে একটি শিশুকে উদ্ধার করেন। শিশুটি সম্ভবত ইহুদি ছিল, কারণ তাকে একটি তাল্লিত (ইহুদিদের প্রার্থনার শাল) দিয়ে মোড়ানো ছিল। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে শিশুদের প্রতি ভালোবাসা, মানুষ হিসেবে মানুষের আচরণ, এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
হাজানাভিসিউস-এর মতে, হলোকস্টের মতো ঘটনার চিত্রায়নের জন্য অ্যানিমেশন একটি উপযুক্ত মাধ্যম। কারণ, অ্যানিমেশনে বাস্তবতার চেয়ে কল্পনার স্থান বেশি থাকে।
তাঁর মতে, ‘অঙ্কনগুলো মিথ্যা বলে না’। ছবিতে দৃশ্যমান কোনো কিছুই বাস্তবে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিনিধিত্ব করে না, বরং এটি দর্শকদের কল্পনাশক্তির ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়।
ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন ডমিনিক ব্ল্যাঙ্ক, গ্রেগরি গ্যাডবোইস-এর মতো খ্যাতিমান অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।
সঙ্গীতের দায়িত্বে ছিলেন অস্কারজয়ী সুরকার অ্যালেক্সান্দ্রে দেসপ্লা।
এই ছবির মাধ্যমে হলোকস্টের সেই সব মানুষের কথা তুলে ধরা হয়েছে, যাঁরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে অন্যদের বাঁচিয়েছিলেন। এই ছবি দর্শককে মানবিকতার এক নতুন দিগন্ত দেখাবে।
মিশেল হাজানাভিসিউস-এর মতে, এই ছবির মূল বার্তা হলো, ‘আমরা সবাই ভালো কিছু করতে পারি’। ছবিটি বর্তমানে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের সিনেমা হলগুলোতে প্রদর্শিত হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান