শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশ্যে ব্ল্যাকরকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) বার্ষিক চিঠি, যা বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলে, এবার রাজনৈতিক আলোচনা এড়িয়ে গেছে। ব্ল্যাকরক বিশ্বের বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান, যার অধীনে রয়েছে প্রায় ১১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ।
ল্যারি ফিঙ্ক নামক এই সিইও’র চিঠিটি ওয়াল স্ট্রিটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রতি বছর প্রকাশিত এই চিঠিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা থাকে।
অতীতে, এই চিঠি পরিবেশগত, সামাজিক এবং সুশাসন (ESG) বিষয়ক বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে। কিন্তু এবারকার চিঠিতে রাজনৈতিক বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, যা বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা, এবং বিভিন্ন দেশের বাজারের মন্দা পরিস্থিতি—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও ফিঙ্কের চিঠিতে কোনো আলোচনা নেই। এমনকি, শ্রমিক, গ্রাহক এবং সমাজের কল্যাণের কথা উল্লেখ করে ব্যবসা প্রসারের ধারণা, যা ‘স্টেকহোল্ডার ক্যাপিটালিজম’ নামে পরিচিত, সেটিও এবার বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিবর্তনের মূল কারণ হলো, ইএসজি বিনিয়োগের বিরুদ্ধে আসা প্রতিক্রিয়া এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন কর্তৃক ‘বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তি’ (DEI) বিষয়ক নীতিমালার ওপর আইনি চাপ সৃষ্টি করা। ব্ল্যাকরক বর্তমানে পানামা খালের দুটি বন্দর অধিগ্রহণের চেষ্টা করছে, যা চীনের নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, রাজনৈতিক বিতর্ক এড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানও তাদের ডিইআই নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে।
যেমন, মেটা, অ্যামাজন, ম্যাকডোনাল্ডস এবং গোল্ডম্যান স্যাকস তাদের ডিইআই কর্মসূচিগুলো সংশোধন করেছে। এই পদক্ষেপগুলো সম্ভবত ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য আইনি চাপ এড়ানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
তবে, কিছু কোম্পানি, যেমন কস্টকো এবং অ্যাপল, তাদের ডিইআই নীতিতে অটল রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ল্যারি ফিঙ্কের এই নীরবতা অন্যান্য ব্যবসায়িক নেতাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিতর্কিত বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়াটাই নিরাপদ মনে করছেন অনেকে। ব্ল্যাকরকের এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলো আমাদের ব্যবসা এবং বিনিয়োগের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, বাজারের এই অস্থিরতা এবং নীতিনির্ধারণী পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: CNN