যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত আবার ক্ষমতায় ফিরলে আমদানি শুল্কের ক্ষেত্রে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেন। আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করা প্রায় সকল পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন, যা বাণিজ্য বিষয়ক বিশ্লেষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
এমন নীতি গ্রহণ করা হলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
ট্রাম্পের এই নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ‘লিবারেশন ডে’ নামে পরিচিত একটি বাণিজ্য নীতির ঘোষণা করতে পারে, যেখানে সকল দেশ থেকে আসা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে। এই পদক্ষেপ তাঁর আগের মেয়াদের নেওয়া শুল্ক নীতির চেয়ে অনেক বেশি আগ্রাসী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে, এমনকি মূল্যবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতার (stagflation) মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে। একদিকে যেমন জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, তেমনই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগকারীরাও এই সিদ্ধান্তের কারণে উদ্বিগ্ন, যার ফলস্বরূপ শেয়ার বাজারে দরপতন হতে শুরু করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এর ধারণা অনুযায়ী, প্রথমে যে ১৫টি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি, তাদের ওপর এই শুল্ক আরোপ শুরু করা হতে পারে। তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সম্ভবত এই ধারণা থেকে সরে এসে সকল দেশের জন্য একটি সাধারণ শুল্ক নীতি গ্রহণ করতে পারেন। এমনটা হলে তা হবে আরও ব্যাপক এবং গুরুতর।
আগের মেয়াদে ট্রাম্প প্রায় $380 বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এবার তাঁর এই নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রায় $3.3 ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক বসতে পারে, যা তাঁর আগের মেয়াদের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি। এমনটা হলে তা বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ রয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি কমে যেতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, বাংলাদেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে।
তবে, হোয়াইট হাউস থেকে বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করবে। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন নীতি গ্রহণ করলে তাৎক্ষণিক কিছু সুবিধা পাওয়া গেলেও, দীর্ঘমেয়াদে তা অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
বর্তমানে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং গবেষণা সংস্থা এই বিষয়ে সতর্কবার্তা জানাচ্ছে। গোল্ডম্যান স্যাকস-এর মতো প্রতিষ্ঠান আগামী ১২ মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা আসার সম্ভাবনা ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত দেখছে, যা আগে ছিল ২০ শতাংশ।
এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে, ট্রাম্পের এই বাণিজ্য নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে এবং এর ফলে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে না।
তথ্য সূত্র: সিএনএন