যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন এবং ফ্লোরিডায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এবং তার সহযোগী বিলিয়নেয়ার এলন মাস্কের রাজনৈতিক প্রভাবের পরীক্ষা হয়েছে। এই নির্বাচনগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো বিশ্ব।
উইসকনসিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনটি ছিল রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদের জন্য। এই নির্বাচনে রক্ষণশীলরা আদালতের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে চেয়েছিল, যেখানে বর্তমানে উদারপন্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এই পদে লড়ছেন উদারপন্থী বিচারক সুসান ক্রফোর্ড এবং রক্ষণশীল ব্র্যাড শিমেল। এই নির্বাচন রাজ্যের জন্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।
কারণ, এই আদালতের হাতেই রাজ্যের গর্ভপাত এবং শ্রমিক ইউনিয়নের অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। এছাড়াও, রাজ্যের আটটি কংগ্রেসনাল জেলার সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়টিও আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করতে পারে, যা বর্তমানে রিপাবলিকানদের অনুকূলে রয়েছে।
নির্বাচনটি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ হওয়া বিচার বিভাগীয় নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। এতে দুই পক্ষের হয়ে প্রায় ৮ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৮০ কোটি টাকা, যেখানে ১ মার্কিন ডলার = ১১০ টাকা) খরচ হয়েছে। এলন মাস্ক এবং তার সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠী এই নির্বাচনে ২০ মিলিয়নের বেশি ডলার বিনিয়োগ করেছেন।
এমনকি মাস্ক নিজে উইসকনসিনে গিয়ে ভোটারদের মধ্যে লটারি-সদৃশ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ২ মিলিয়ন ডলারের চেক বিতরণ করেছেন। মাস্কের এই বিনিয়োগ শুরু হয়, যখন টেসলা রাজ্যের একটি আইনের বিরুদ্ধে মামলা করে, যা তাদের রাজ্যে গাড়ি ডিলারশিপ খোলার অনুমতি দেয় না।
অন্যদিকে, ফ্লোরিডায় একটি বিশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে রিপাবলিকান প্রার্থী র্যান্ডি ফাইনকে পরাজিত করে ডেমোক্রেট প্রার্থী জশ ওয়েল জয়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন। এই আসনে জয়ী হয়ে যদি ডেমোক্রেটরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।
বর্তমানে প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা খুবই সামান্য, যা হলো ২১৮-২১৩।
উভয় রাজ্যের নির্বাচনগুলোতে একদিকে যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা যাচাই হয়েছে, তেমনি এলন মাস্কের রাজনৈতিক প্রভাবও আলোচনায় এসেছে। মাস্কের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন বিতর্কের কারণে অনেক ডেমোক্রেট ভোটার তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এই নির্বাচনে মাস্কের অংশগ্রহণের বিষয়টি ডেমোক্রেটদের ভোটারদের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ জুগিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফ্লোরিডার এই নির্বাচন যদি ডেমোক্রেটদের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনে, তবে তা আসন্ন নির্বাচনে দলটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে। কারণ, ফ্লোরিডার এই নির্বাচনের ফল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসেও প্রভাব ফেলবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান