সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট মেটা’র (ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ) বিরুদ্ধে কেনিয়ার প্রাক্তন কন্টেন্ট মডারেটরদের একটি মামলা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিষয় হল, এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে আপত্তিকর কনটেন্ট দেখা এবং তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে গিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়েছেন কর্মীরা।
গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, এই কর্মীদের প্রতি মেটার দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কারণে তারা মানসিক আঘাতের শিকার হয়েছেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, কেনিয়ার এই কর্মীরা মূলত একটি বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) কোম্পানি, ‘সামা’র মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে মেটার হয়ে কাজ করতেন। তাদের প্রধান কাজ ছিল ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে আসা বিভিন্ন আপত্তিকর কনটেন্ট পর্যালোচনা করা এবং সেগুলোকে সরিয়ে দেওয়া।
এই কাজটি করতে গিয়ে তারা সহিংসতা, ঘৃণা, এবং নানা ধরনের ভীতিকর দৃশ্যের মুখোমুখি হতেন।
অভিযোগকারীরা বলছেন, এমন কনটেন্ট দেখতে দেখতে তাদের মধ্যে অনেকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়েছেন। এদের মধ্যে ১৪০ জনের বেশি কর্মী পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি), বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগে ভুগছেন।
কর্মীদের অভিযোগ, এই কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের জন্য পর্যাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দেয়নি মেটা।
অন্যদিকে, মেটা’র দাবি, কর্মীরা তাদের সরাসরি কর্মচারী ছিলেন না। তারা ‘সামা’র অধীনে কাজ করতেন, তাই কর্মীদের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
তবে, কেনিয়ার আদালত এই মামলায় কর্মীদের পক্ষে রায় দিয়েছেন।
আদালত মনে করে, মামলাটি শ্রম আদালতে চলতে পারে।
আদালতের এই সিদ্ধান্তকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, এর মাধ্যমে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কর্মীদের অধিকার এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেখানে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগের প্রবণতা বাড়ছে, সেখানে কর্মীদের অধিকার রক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
মেটা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কর্মীদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা কেনিয়ার সরকারের সঙ্গে লবিং করারও চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশেও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আসা কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে কন্টেন্ট মডারেটরদের মানসিক স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কারণ, এখানেও অনেক কর্মী এই ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের উপর মানসিক চাপ অনেক বেশি। অনেক সময় ভুয়া খবর ও বিদ্বেষপূর্ণ কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে গিয়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।
কেনিয়ার আদালতের এই মামলার রায় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা।
এর মাধ্যমে কর্মীদের অধিকার এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে, উন্নত দেশগুলোর মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি আরও একবার সামনে এল।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা