যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে বড় ধরনের কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে, যা দেশটির স্বাস্থ্যখাতে গভীর প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (এইচএইচএস) থেকে জানা গেছে, প্রায় ১০ হাজার কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
একইসঙ্গে আরও ১০ হাজার কর্মী স্বেচ্ছায় অবসরে গেছেন অথবা তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে কর্মী সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমতে চলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র এই পরিবর্তনের ঘোষণা করেন। তিনি জানান, স্বাস্থ্যখাতকে আরও সুসংহত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এইচএইচএস-এর অধীনে থাকা বিভিন্ন সংস্থাকে একত্র করে ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর এ হেলদি আমেরিকা’ নামে একটি নতুন বিভাগ তৈরি করা হবে। এর ফলে, রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা গবেষণা, খাদ্য ও ওষুধের নিরাপত্তা নিরীক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোও প্রভাবিত হবে।
এই বিভাগের বাজেট ১.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কর্মকর্তারা বলছেন, কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)-এর প্রায় ৩,৫০০ জন, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)-এর ২,৪০০ জন, জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএইচ)-এর ১,২০০ জন এবং মেডিকেয়ার ও মেডিকেইড বিষয়ক কেন্দ্র (সিএমএস)-এর ৩০০ জন কর্মী চাকরি হারাবেন।
এছাড়াও, এইচএইচএস-এর মানবসম্পদ, ক্রয়, অর্থ ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের কর্মীরাও ছাঁটাইয়ের আওতায় পড়বেন।
এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিরোধী দল ও শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, এর ফলে স্বাস্থ্যখাতে সংকট তৈরি হবে এবং জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশেষ করে জরুরি অবস্থার সময়, যেমন কোনো মহামারী বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিরোধী দলের নেতারা মনে করেন, সরকারের এই পদক্ষেপ জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চরম ঝুঁকি তৈরি করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর প্যাটি মারে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে হামের প্রাদুর্ভাবের মতো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে। ডেমোক্রেট দলের অন্য সদস্যরাও এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
তারা বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে কর্মীদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে এবং সরকারের জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়বে।
এদিকে, এইচএইচএস-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি কোভিড-১৯ সম্পর্কিত তহবিল কমানোর কারণে রাজ্য ও স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগেও কাটছাঁট শুরু হয়েছে।
এর ফলে সেখানকার কর্মীরাও চাকরি হারাতে পারেন।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, উন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়ন কমালে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের কার্যক্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এতে করে, ভবিষ্যতে নতুন কোনো রোগ দেখা দিলে তা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র এই বিষয়ে বলেছেন, এই পুনর্গঠনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাত আরও কার্যকর হবে এবং কম খরচে বেশি কাজ করা সম্ভব হবে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস