মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মহামন্দার সময়ে আয়োজিত নাচের ম্যারাথন প্রতিযোগিতাগুলি নিয়ে নতুন একটি শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন শিল্পী নিকোল ওয়ারমার্স। ‘ম্যারাথন ডান্স রিলিফ’ নামের এই শিল্পকর্মটি মূলত ১৯২০ ও ৩০ এর দশকে চলা এক ধরনের প্রতিযোগিতার কথা বলে, যেখানে বিজয়ী হওয়ার আশায় যুগল প্রতিযোগীরা দিনের পর দিন নাচতেন।
বিজয়ীদের জন্য পুরস্কার হিসেবে থাকত এক বছরের বেতনের সমান অর্থ।
আয়ারল্যান্ডের লিসমোরের সেন্ট কার্থেজ হলে প্রদর্শিত এই শিল্পকর্মটি ওয়ারমার্সের পরিচিত শৈলী থেকে খানিকটা ভিন্ন। সাধারণত তিনি আরাম-আয়েশের ছবি আঁকতে পছন্দ করেন, কিন্তু এখানে তিনি ক্লান্ত শরীর এবং কঠোর পরিশ্রমের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত দরিদ্র শ্রেণির মানুষ ছিলেন, যাদের নাচ দেখতে আসতেন সমাজের ধনী শ্রেণীর লোকেরা। ওয়ারমার্সের কাজে সেই সময়ের শ্রেণী বৈষম্যের চিত্রও ফুটে উঠেছে।
তখনকার সময়ে গণ-বিনোদন হিসেবে নাচের ম্যারাথন বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তবে এর কারণে প্রতিযোগীদের উপর শারীরিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি হতো, এমনকি কারো কারো মৃত্যুও হতো।
সেই সময়ের ছবি তোলার প্রবণতা এবং আমেরিকান ম্যাগাজিনের উত্থান—উভয় মিলেই নাচের ম্যারাথনের অনেক সাদা-কালো ছবি আজও টিকে আছে, যেখানে ক্লান্ত যুগলদের একসঙ্গে ধরে থাকার চেষ্টা করতে দেখা যায়। ওয়ারমার্স এই ছবিগুলো থেকেই তার কাজের উপাদান সংগ্রহ করেছেন।
এই সময়ের প্রেক্ষাপটে ১৯৭০ সালে ‘দে দেয়ার ডান্স’ নামে একটি সিনেমাও তৈরি হয়েছিল, যেখানে জেন ফন্ডা অভিনয় করেছিলেন।
ওয়ারমার্সের ‘ম্যারাথন ডান্স রিলিফ’-এ ১০টি আয়তক্ষেত্রাকার ধূসর ফলক ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি ফলকে বায়ু-শুকনো মাটি দিয়ে তৈরি নাচেরত যুগলের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
এগুলোকে পুরনো ক্যাফে টেবিলের উপর স্থাপন করা হয়েছে, যা অনেকটা ভাস্কর্যের মতো। ওয়ারমার্স তার কাজে স্পর্শযোগ্যতা এবং হাতে গড়া পদ্ধতির ব্যবহার করেছেন, সেই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন বস্তুকে তাদের স্বাভাবিক প্রেক্ষাপট থেকে সরিয়ে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে ভালোবাসেন।
ওয়ারমার্স মূলত তার ব্যঙ্গাত্মক ভাস্কর্যের জন্য পরিচিত, যেখানে শরীরের অসম্পূর্ণ চিত্র অথবা বিশ্রামরত মানুষের ছবি থাকে। নারীদের নগ্ন মূর্তি হোটেল পরিষ্কার করার ট্রলিতে স্থাপন করা, কিংবা শিল্পকর্মের ইতিহাসে নারীর শ্রমকে উপেক্ষা করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে তিনি কাজ করেন।
ওয়ারমার্স সব সময় তার কাজের একটি নির্দিষ্ট ধারা বজায় রাখতে চান এবং তিনি নিজেকে প্রধানত একজন ভাস্কর হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
‘ম্যারাথন ডান্স রিলিফ’ শব্দবন্ধটি একদিকে যেমন তার নতুন শিল্পকর্মের গঠনকে বোঝায়, তেমনই এটি সেই প্রতিযোগীদের সংক্ষিপ্ত বিশ্রাম বা ‘রিলিফ’-এর কথাও বলে, যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেচে ক্লান্ত হয়ে পড়তেন।
ওয়ারমার্সের এই শিল্পকর্মটি একটি পুরনো ভিক্টোরিয়ান চার্চের হলঘরে স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে রঙিন কাঁচের জানালা থেকে আলো এসে পড়ে। হলঘরের এই পরিবেশে মাটির তৈরি মূর্তিগুলো দর্শকদের মধ্যে এক ভিন্ন অনুভূতি তৈরি করে।
ওয়ারমার্সের ‘ম্যারাথন ডান্স রিলিফ’-এর ক্লান্ত যুগলদের দেখলে মনে হয় যেন তারা বক্সিং ম্যাচের প্রতিযোগী অথবা নাইট ক্লাবের নেশাগ্রস্ত মানুষ।
ওয়ারমার্সের মূল বিষয় সম্ভবত এই নাচের প্রতিযোগিতাগুলো নয়, বরং সমাজে যুগলের সম্পর্ক, নির্ভরশীলতা এবং এর সঙ্গে জড়িত ভয় ও অনিশ্চয়তা।
ঐতিহ্যগতভাবে, ক্লাসিক্যাল রিলিফে সাধারণত শক্তিশালী ও বিজয়ী মানুষের চিত্র থাকে। কিন্তু ওয়ারমার্সের এই কাজটি ‘ব্যর্থতার নৃত্য’ উপস্থাপন করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান