ভূমিকম্পের পরে ধ্বংসস্তূপের নিচে কতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ জীবিত থাকতে পারে?
প্রকৃতির রুদ্ররোষে কেঁপে ওঠা পৃথিবীর বুকে ভূমিকম্প একটি বিভীষিকা। সম্প্রতি মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে আঘাত হানা ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে হাজারো মানুষের জীবনহানি ঘটেছে।
ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া ব্যক্তিদের জীবন রক্ষার জন্য সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কতক্ষণ পর্যন্ত একজন মানুষ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবিত থাকতে পারে?
আসুন, এই বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষের জীবনধারণ বহু কারণের উপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে অন্যতম হলো আবহাওয়া, বাতাস ও পানির সহজলভ্যতা এবং আহত হওয়ার তীব্রতা।
যদি আঘাত গুরুতর না হয়, তবে উপযুক্ত পরিবেশে একজন ব্যক্তি এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরেও জীবিত থাকতে পারে।
ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকারীরা দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু করেন। সাধারণত, দুর্যোগের প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। এরপর প্রতিদিন এই সম্ভাবনা কমতে থাকে।
ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া ব্যক্তিদের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা করা জরুরি। খাবার ছাড়া হয়তো কিছু দিন টেকা যেতে পারে, কিন্তু জল ছাড়া বেশি দিন টেকা কঠিন।
ভূমিকম্পে আটকে পড়লে কিছু বিষয় জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। যেমন, যদি কোনো ব্যক্তি এমন স্থানে আটকা পড়েন যেখানে তেমন কোনো আঘাত লাগেনি, যেমন— কোনো মজবুত টেবিলের নিচে বা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে, তাহলে তার বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
তবে আগুন, ধোঁয়া বা রাসায়নিক পদার্থের কারণে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়াও উদ্ধার কার্যক্রমকে কঠিন করে তোলে এবং জীবিত থাকার সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।
অতীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যেখানে ভূমিকম্পের কয়েক দিন পরও মানুষ জীবিত উদ্ধার হয়েছে। ২০১১ সালে জাপানে ভূমিকম্প ও সুনামির ৯ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে এক কিশোর ও তার ৮০ বছর বয়সী ঠাকুরমাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল।
হাইতিতে ভূমিকম্পের ১৫ দিন পর এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
ভূমিকম্পের সময় এবং পরে, কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। ভূমিকম্পের সময়, দ্রুত কোনো মজবুত আশ্রয় খুঁজে নিতে হবে।
যেমন— কোনো টেবিল বা শক্ত আসবাবপত্রের নিচে যাওয়া যেতে পারে। মুখ ও মাথা রক্ষার জন্য কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে।
ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়লে, শক্তি সঞ্চয় করে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে। উদ্ধারকর্মীদের সাহায্যের জন্য শব্দ করা যেতে পারে অথবা ফোনের ব্যাটারি বাঁচিয়ে মাঝে মাঝে যোগাযোগের চেষ্টা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশেও ভূমিকম্প একটি উদ্বেগের বিষয়। তাই ভূমিকম্পের সময় করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস