মহাকাশে প্রথমবারের মতো মেরু অঞ্চল প্রদক্ষিণ করে পৃথিবীতে ফিরলেন চারজন পর্যটক। একটি বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত এই মিশনে অংশ নেওয়া অভিযাত্রীরা উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর উপর দিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথে ভ্রমণ করেন। শুক্রবার প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণের মাধ্যমে তাদের সাড়ে তিন দিনের এই অভিযান শেষ হয়।
এই মিশনে নেতৃত্ব দেন বিটকয়েন বিনিয়োগকারী এবং মাল্টার নাগরিক চুং ওয়াং। তিনি একটি স্পেসএক্স ড্রাগন ক্যাপসুল ভাড়া করেন, যেখানে বিশেষভাবে তৈরি একটি গম্বুজাকৃতির জানালা ছিল, যা থেকে মেরু অঞ্চলের এবং তার আশেপাশের এলাকার ৩৬০-ডিগ্রি দৃশ্য দেখা যেত। ওয়াং-এর সাথে ছিলেন নরওয়েজিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা জেনিক মিক্কেলসেন, জার্মান রোবোটিক্স গবেষক রাবেয়া রগে এবং অস্ট্রেলীয় মেরু অঞ্চলের গাইড এরিক ফিলিপস।
সোমবার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে যাত্রা শুরু করে দলটি। এটি ছিল কোনো মানুষের দল কর্তৃক পৃথিবীর মেরু অঞ্চল প্রদক্ষিণ করার প্রথম ঘটনা। এছাড়াও, গত ৫০ বছরে এই প্রথম কোনো মহাকাশ অভিযান প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণ করলো।
অভিযানের সময়, অভিযাত্রীরা বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মহাকাশে প্রথমবারের মতো চিকিৎসা সংক্রান্ত এক্স-রের ছবি তোলা। এছাড়াও তারা আরও প্রায় ২৪টি ভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তাদের এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ফ্রাম২’। এক শতাব্দীরও বেশি আগে নরওয়েজিয়ান নাবিকদের মেরু অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া একটি জাহাজের নামানুসারে এই নামকরণ করা হয়। এমনকি মূল জাহাজের কাঠের কিছু অংশও তাদের সঙ্গে মহাকাশে ছিল।
অভিযাত্রীদের একজন রাবেয়া রগে, মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দৃশ্য সম্পর্কে বলেন, “এটি ছিল অসাধারণ, কারণ এটি এক ভিন্ন ধরনের মরুভূমি, যা অবিরাম চলতেই থাকে।” জেনিক মিক্কেলসেন তার ক্যামেরার সরঞ্জাম নিয়ে ক্যাপসুলে ছিলেন এবং বেশিরভাগ সময় দৃশ্য ধারণে ব্যস্ত ছিলেন।
চুং ওয়াং জানান, মহাকাশে পৌঁছানোর পর সবাই প্রথমে অসুস্থ বোধ করেছিলেন। তবে দ্বিতীয় দিনে তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং দক্ষিণ মেরুর উপরে থাকা জানালাটি খোলেন।
তাদের অবতরণের পর, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অভিযাত্রীরা নিজেরাই ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসেন এবং তাদের সরঞ্জাম বহন করেন। এরপর তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।
স্পেসএক্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অভিযানের মাধ্যমে ফ্লোরিডার পরিবর্তে প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা মূলত নিরাপত্তার কথা ভেবে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, ক্যাপসুলের কোনো অংশ যদি পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় টিকে থাকে, তবে তা সমুদ্রে পড়বে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের অ্যাপোলো-সয়ুজ মিশনের তিনজন নভোচারী সর্বশেষ প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণ করেছিলেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস