ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই ইয়েমেনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র দেশগুলোর বিমান হামলার পরেও হুতি বিদ্রোহীরা যেন আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে একটি বড় সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর উপর হামলা চালানো শুরু করে। তাদের এই হামলায় ইতোমধ্যে অনেক জাহাজের ক্ষতি হয়েছে, যার ফলস্বরূপ এই রুটে চলাচল করা জাহাজের সংখ্যা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।
লোহিত সাগর, যা এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য সংযোগের গুরুত্বপূর্ণ পথ, সেখানে জাহাজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় বিশ্বজুড়ে পণ্য সরবরাহ এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র হুতি বিদ্রোহীদের দমনের জন্য বিমান হামলা শুরু করে। তারা দাবি করে যে, এই অভিযান সফল হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, হুতিরা যেন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে আরও বেশি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছে।
এমনকি তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের (UAE) মত দেশগুলোতেও হামলার হুমকি দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, হুতিদের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এখনো অক্ষত আছে। ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার সক্ষমতাও তাদের আগের মতোই বহাল রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান বাবদ এরই মধ্যে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, কিন্তু হুতিদের ক্ষমতা ধ্বংস করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে স্থল অভিযান চালানোর সম্ভাবনাও ক্রমশ বাড়ছে।
কারণ, বিমান হামলার মাধ্যমে হুতিদের দমানো কঠিন। হুতি বিদ্রোহীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে টিকে আছে। তাদের টিকে থাকার পেছনে রয়েছে চোরাচালানের মাধ্যমে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করার ব্যবস্থা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুতিদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের গভীর কৌশলগত পরিবর্তনের প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ঘটনার জন্য ইরানকে দায়ী করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ইরান হুতিদের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছে, তবে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেওয়া থেকে তারা বিরত থাকছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত হুতিদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে এবং এর ফলস্বরূপ এই অঞ্চলে একটি বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে, হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ দেশটির উত্তরাঞ্চলের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ করছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হুতিদের পুরোপুরি নির্মূল করতে হলে স্থল অভিযান অপরিহার্য। তবে, এর ফলে সংঘাত আরও বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কী পদক্ষেপ নেয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন