তালিবানের হাতে বন্দী ব্রিটিশ দম্পতির কারাবাসের করুণ চিত্র। আফগানিস্তানে তালিবান শাসনের অধীনে, কাবুলের একটি কারাগারে বন্দী এক ব্রিটিশ দম্পতিকে নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
পিটার রেনল্ডস নামে ৭৯ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ নাগরিক, যিনি নয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী রয়েছেন, সেখানকার ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন। পুল-ই-চারখি কারাগার থেকে একটি ফোন কলে তিনি তাঁর দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা জানান, যা শুনলে গা শিউরে ওঠে।
কারাগারের পরিবেশ:
পিটার রেনল্ডস জানিয়েছেন, কারাগারের পরিবেশ ‘নরকের কাছাকাছি’। তাঁর সেলটি একটি খাঁচার মতো, যেখানে তিনি অন্যান্য কুখ্যাত আসামীদের সঙ্গে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁর সাথে রয়েছেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি নিজের স্ত্রী ও তিন সন্তানকে হত্যা করেছেন। রেনল্ডস তাঁর স্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন, যিনি কারাগারের মহিলা বিভাগে বন্দী রয়েছেন। কারাগারে তিনি দিনে মাত্র একবার খাবার পান এবং শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন।
আফগানিস্তানে তাঁদের কাজ:
আফগানিস্তানে এই দম্পতি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে স্কুল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০২১ সালে তালিবান ক্ষমতা দখলের পরেও তাঁরা দেশ ছাড়েননি। তাঁদের বন্ধু, একজন চীনা-মার্কিন নাগরিক, ফায়ে হল-এর ভাড়া করা একটি ছোট বিমানে করে বামিয়ান প্রদেশে যাওয়ার সময়, ফেব্রুয়ারির শুরুতে তাঁদের আটক করা হয়। ফায়ে হলকে অবশ্য পরে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
গ্রেফতারের কারণ ও অভিযোগ:
পিটার রেনল্ডস জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি থেকে ৫৯টি বই জব্দ করা হয়েছে, যেগুলোর বিরুদ্ধে ‘ইসলামের বিরোধী’ হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তাঁদের সঙ্গে কাজ করা ৩০ জনের বেশি মানুষকে জেরা করা হয়েছে। তাঁদের হিসাবরক্ষক ও কর কর্মকর্তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যদিও, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ ও মুক্তি:
আটক হওয়ার পর প্রথমে তাঁদের জানানো হয়েছিল যে বিমানের অবতরণের অনুমতি ছিল না, তাই দ্রুতই মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু পরে তাঁদের ফোন জব্দ করা হয় এবং কাবুলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ফায়ে হলকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, কারণ ট্রাম্প প্রশাসন তালিবান নেতাদের মাথার উপর থাকা ১ কোটি মার্কিন ডলারের (প্রায় ১১০ কোটি বাংলাদেশি টাকা) পুরস্কার তুলে নিয়েছিল।
দম্পতির বক্তব্য:
পিটার রেনল্ডস মনে করেন, তালিবান ভুল করেছে এবং তাঁদের মুক্তি দেওয়া উচিত। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এগুলো অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং দুঃখজনক। তালিবান একটি ভুল করেছে এবং তাদের এটি স্বীকার করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি:
বর্তমানে, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের উচিত এই দম্পতির মুক্তির জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। তাঁদের এই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান