ইস্তাম্বুলের মেয়র ইমামোগলুর গ্রেপ্তার: বিক্ষোভ ও তুরস্কের রাজনীতি
তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগলুকে সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে, যা তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
বিক্ষোভকারীরা ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার এবং তাদের অভিযোগ, এই গ্রেপ্তারের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে।
ইমামোগলুর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে – একটি অপরাধমূলক সংগঠন তৈরি ও পরিচালনা, ঘুষ গ্রহণ, চাঁদাবাজি, ব্যক্তিগত তথ্য বেআইনিভাবে সংগ্রহ ও দরপত্র (টেন্ডার) কারচুপির মতো বিষয়। যদিও ইমামোগলু শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) নেতা ওজগুরু ওজেল এই বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং ইমামোগলুর মুক্তি ও দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে একটি পিটিশন চালু করেছেন। অনেকের ধারণা ছিল, ইমামোগলু ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
তবে তার গ্রেপ্তার এবং এর আগে তার বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি বাতিল হওয়ায় সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এসেছে।
২০১৯ সালে মেয়র নির্বাচনের সময় ইমামোগলু খুব সাধারণ প্রচারণা চালিয়েছিলেন। ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একে পার্টি) নির্বাচনের ফল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার পরেও তিনি নির্বাচনে জয়ী হন।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ইস্তাম্বুলের অবকাঠামো, সামাজিক পরিষেবা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইমামোগলুর জনপ্রিয়তার একটি কারণ হলো তার ব্যক্তি ইমেজ। তিনি উষ্ণ, বন্ধুত্বপূর্ণ, স্পষ্টভাষী এবং সহজে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেন।
তাছাড়া, তুরস্কের রাজনীতিতে বিভেদ সৃষ্টিকারী প্রবণতা থেকে তিনি নিজেকে দূরে রেখেছেন, যা তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
তবে, ইমামোগলুর মেয়র হিসেবে কিছু সমালোচনাও রয়েছে। ২০১৯ সালে বন্যার কারণে শহর প্রস্তুত না করতে পারায় তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন।
এছাড়াও, ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনের পর দ্রুত স্কিইং করতে যাওয়ায়ও তিনি সমালোচিত হন।
অন্যদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এই অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে মানতে নারাজ।
তিনি বলছেন, অভিযুক্ত যে কেউ হোক না কেন, তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বিক্ষোভের নামে রাস্তায় সহিংসতার নিন্দা করে এরদোগান সিএইচপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর থেকে তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই ঘটনা একদিকে যেমন গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান জানানোর দাবি, তেমনি এরদোগানের সরকারের বিরুদ্ধে ভিন্নমত দমনের অভিযোগও জোরালো করছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা