সমুদ্রপথে কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর নির্গমন হারের ওপর কর বসানোর বিষয়ে দেশগুলো একটি চুক্তিতে আসার চেষ্টা করছে, যা কার্যত বিশ্বের প্রথম বৈশ্বিক কার্বন ট্যাক্স হতে পারে।
এই পদক্ষেপের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থা বা আইএমও (International Maritime Organization) এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সংস্থাটি ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্র পরিবহন খাতে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। একইসঙ্গে, শূন্য বা প্রায় শূন্য কার্বন নিঃসরণকারী জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।
বর্তমানে লন্ডনে আইএমও’র মেরিন এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশন কমিটি বা এমইপিসি’র (Marine Environment Protection Committee) বৈঠক চলছে। এই কমিটির সদস্য দেশগুলো সমুদ্রপথে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ওপর কর আরোপ এবং পরিষ্কার জ্বালানির ব্যবহার চালুর জন্য নতুন বৈশ্বিক নিয়ম তৈরির চেষ্টা করছে।
আইএমও’র সেক্রেটারি-জেনারেল আর্সেনিও ডমিংগেজ মনে করেন, কার্বন দূষণ কমাতে শিল্পখাতকে আরও অনেক কিছু করতে হবে।
তাঁর মতে, এই নিয়মগুলো কেবল জলবায়ু সংক্রান্ত আকাঙ্ক্ষা নয়, বরং বিশ্বজুড়ে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে “সমুদ্র পরিবহন খাতের জন্য একটি কার্বনমুক্ত ভবিষ্যৎ” তৈরির পথ সুগম হবে।
বর্তমানে, সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজগুলো প্রধানত ভারী জ্বালানি তেল ব্যবহার করে, যা কার্বন ডাই অক্সাইডসহ অন্যান্য দূষিত পদার্থ নির্গত করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শিল্পের কার্বন নিঃসরণ কমাতে হলে জ্বালানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে জাহাজের আকার বড় হওয়ার কারণে সমুদ্র পরিবহন থেকে নির্গমন প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে।
কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে দেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
কিছু দেশ, বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলো, নির্গমনের প্রতি মেট্রিক টনে একটি নির্দিষ্ট হারে কর আরোপের পক্ষে। তাদের মতে, এটি ন্যায্য উপায়ে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
অন্যদিকে, চীন, ব্রাজিল, সৌদি আরব এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো ক্রেডিট ট্রেডিং মডেলের পক্ষে। এই মডেলে, জাহাজগুলো তাদের নির্গমন লক্ষ্যমাত্রার নিচে থাকলে ক্রেডিট পাবে এবং বেশি নির্গমন করলে ক্রেডিট কিনতে হবে।
মার্শাল আইল্যান্ডসের সমুদ্র বিষয়ক বিশেষ দূত অ্যাম্বাসেডর আলবন ইশোদা বলেছেন, এই ধরনের কর আরোপ করা না হলে আইএমও’র জলবায়ু লক্ষ্যগুলো অর্থহীন হয়ে পড়বে।
তাঁর মতে, এই কর থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সবুজ প্রযুক্তির দিকে যেতে সাহায্য করতে পারে, যাতে তারা পুরোনো ও দূষণকারী জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল না থাকে।
এই আলোচনার ফলস্বরূপ, যদি কমিটি প্রস্তাবিত নিয়মগুলোর বিষয়ে একমত হতে পারে, তবে অক্টোবর মাসের মধ্যে সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হতে পারে এবং ২০২৭ সাল থেকে তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
এই ট্যাক্স বা করের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু প্রভাব পড়তে পারে।
সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়লে, তা আমদানি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।
তবে, কার্বন নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের সমর্থন জানানো উচিত, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
তথ্য সূত্র: