গাজায় সাংবাদিকদের ওপর ইসরায়েলি হামলা: মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আবারও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের কাছে একটি মিডিয়া তাঁবুতে চালানো হামলায় অন্তত দুই জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ভোরের এই হামলায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহতও হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক হেলমি আল-ফাকাবি এবং ইউসুফ আল-খাজিন্দার। কুদস নিউজ নেটওয়ার্কের অনলাইনে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, তাঁবুটিতে আগুন জ্বলছে। সেখানকার উপস্থিত কিছু মানুষ আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন।
প্রতিবেদনে প্রকাশ, হামলায় নয় জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছয় জনই সাংবাদিক। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন সাংবাদিক হাসান ইসলাইহ ও ইহাব আল-বার্দিনি। ইহাবের মাথায় স্প্লিন্টারের আঘাত লাগে, যা তার চোখ দিয়ে বের হয়ে যায়। সাংবাদিক আহমেদ মনসুর জীবন-মরণ লড়াই করছেন বলেও জানা গেছে, তিনি গুরুতরভাবে পুড়ে গেছেন।
আল জাজিরা আরবি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে গাজায় চালানো অন্যান্য হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে এবং গাজা শহরের জেইতুন জেলায় হামলায় নিহত হয়েছে আরও পাঁচ জন। দেইর আল-বালাহ এবং গাজা শহরের উত্তরে আল-জুরুন এলাকায়ও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
এই মিডিয়া তাঁবুতে হামলার আগের দিন, সাংবাদিক ইসলাম মেকদাদ, তাঁর স্বামী ও সন্তান নিহত হন। এর ফলে গাজায় গণমাধ্যম কর্মীদের হতাহতের সংখ্যা আরও বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘দ্য ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স’-এর তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ২৩২ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীকে হত্যা করেছে।
তাদের ‘কস্টস অফ ওয়ার’ প্রকল্পের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় বোমা হামলায় প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৩ জন সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মী নিহত হচ্ছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই সংঘাতে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, যুগোস্লাভিয়া যুদ্ধ এবং আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধ—সবগুলো একত্র করলে যা হয়, তার চেয়েও বেশি।
তবে গাজায় কতজন সাংবাদিককে বিশেষভাবে লক্ষ্য করে হত্যা করা হয়েছে, সেই বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’ (আরএসএফ) -এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত ৩৫টি ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যেখানে সম্ভবত তাঁদের কাজের কারণে সামরিক বাহিনী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে হত্যা করেছে।
সাংবাদিক অ্যান্টনি লোয়েনস্টাইন আল জাজিরাকে বলেছেন, ইসরায়েল ‘ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে’। তাঁর মতে, গাজায় নিহত মিডিয়া কর্মীদের সংখ্যা গত ১০০ বছরের সব সংঘাতের মিলিত হিসাবের চেয়েও বেশি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা