**ফিজিতে পর্যটকদের জন্য ‘লোলোমা আওয়ার’: প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতার নতুন দিগন্ত**
বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের মধ্যে গন্তব্য নির্বাচনের ধারণা পাল্টে যাচ্ছে। ভ্রমণের পাশাপাশি প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য কিছু করার মানসিকতা বাড়ছে।
এই পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে, ফিজিতে চালু হয়েছে এক অভিনব উদ্যোগ—‘লোলোমা আওয়ার’।
ফিজির অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান অনস্বীকার্য। গত বছর দেশটি প্রায় ১০ লক্ষ পর্যটকের স্বাগত জানিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।
তবে পর্যটকদের আনাগোনায় পরিবেশের উপর যে চাপ সৃষ্টি হয়, তা মোকাবিলা করতে ‘লোলোমা আওয়ার’ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই কার্যক্রমের মূল ধারণা হলো, ফিজিতে ভ্রমণে আসা প্রত্যেক পর্যটক তাঁদের ভ্রমণের একটি ঘণ্টা স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নে ব্যয় করবেন।
লোলোমা আওয়ার-এর অধীনে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রবাল প্রাচীর সংরক্ষণ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, উপকূল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ।
পর্যটকেরা কোকোমো প্রাইভেট আইল্যান্ডে সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীগদের সঙ্গে প্রবাল রোপণ করতে পারেন, ভিয়ানি বে রিসোর্টে তেল ও লবণ তৈরির প্রক্রিয়া পরিদর্শন করতে পারেন, শাংরি-লা ইয়ানুকা আইল্যান্ডে ম্যানগ্রোভ রোপণ করতে পারেন, সিক্স সেন্সেস ফিজিতে ফিজিয়ান ক্রেস্টেড ইগুয়ানা গণনা ও সংরক্ষণে অংশ নিতে পারেন, এমনকি বারেফুট কুয়াটা আইল্যান্ড রিসোর্টে হাঙ্গর দেখা ও বিচ পরিষ্কার করার মতো কার্যক্রমেও যুক্ত হতে পারেন।
ফিজির পর্যটন বিভাগের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা শ্রীষ্টি নারায়ণ জানিয়েছেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর পর পর্যটকদের মধ্যে আরও দায়িত্বশীল এবং ইতিবাচক অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রবণতা বেড়েছে।
তাঁরা এখন এমন ভ্রমণের দিকে ঝুঁকছেন, যা তাঁদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
লোলোমা আওয়ার প্রকল্পটি ইতিমধ্যে বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট এবং ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
এই উদ্যোগে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে পর্যটকেরা একদিকে যেমন প্রকৃতির কাছাকাছি আসার সুযোগ পান, তেমনি স্থানীয় সংস্কৃতি ও পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারেন।
ফিজির এই উদ্যোগ শুধু পর্যটকদের একটি ঘণ্টা দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
এর মূল লক্ষ্য হলো, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে পর্যটকদের মধ্যে একটি সচেতনতা তৈরি করা, যা তাঁদের মধ্যে প্রকৃতির প্রতি আরও বেশি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ তৈরি করবে।
ফিজির পর্যটন বিভাগ আশা করছে, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা অন্তত ৫,০০০ ঘণ্টা পরিবেশ সুরক্ষার কাজে যুক্ত করতে পারবে।
ফিজির এই পদক্ষেপ অন্যান্য দ্বীপরাষ্ট্রের জন্যও একটি মডেল হতে পারে। ‘লোলোমা আওয়ার’-এর মতো কার্যক্রমের মাধ্যমে পর্যটন এবং পরিবেশ—উভয়কেই একসঙ্গে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।
এর ফলে পর্যটকেরা যেমন প্রকৃতির কাছাকাছি আসার সুযোগ পাবেন, তেমনি স্থানীয় সংস্কৃতি ও পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারবেন।
তথ্যসূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার