মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের ব্যাপক দরপতনের পর, বাজার আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশঙ্কা বাড়ছে, যা একটি ‘bear market’-এর ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব বাণিজ্য নিয়ে উদ্বেগের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সোমবার সকালে, সূচক কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার ইঙ্গিত দিলেও, এশীয় ও ইউরোপীয় বাজারে বড় ধরনের লোকসান হয়েছে। ডাউ জোন্স ফিউচার্স ৮০০ পয়েন্টের বেশি কমে যায়, যা শতকরা হিসাবে ২.১ শতাংশ। এস অ্যান্ড পি ৫০০ এবং নাসডাক ফিউচার্সেও যথাক্রমে ২.৪ শতাংশ ও ২.৭ শতাংশ পতনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যদিও এই পতনগুলো বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, রোববার রাতের সর্বনিম্ন পয়েন্টের তুলনায় এগুলো কিছুটা কম ছিল।
শেয়ার বাজার দ্রুত কমতে থাকায় কিছু বিনিয়োগকারী হয়তো এখন শেয়ার কেনার সুযোগ দেখছেন। কারণ, বাজারে বর্তমানে শেয়ারের দাম তুলনামূলকভাবে কম রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে আয়ের হিসাব অনুযায়ী শেয়ারের দাম এখন ১৫ গুণ কম দামে কেনাবেচা হচ্ছে। এই কারণে, বিনিয়োগকারীরা যদি মনে করেন শেয়ারগুলো ‘oversold’ হয়ে গেছে, তবে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য নিয়ে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে তিনি আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজারের এই অবস্থা ট্রাম্প প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, বাজারের এই অস্থিরতা তাদের নীতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, বাজারের এই পতন সম্ভবত অপরিহার্য ছিল, যা প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করবে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প অবশ্য বলছেন যে, মন্দার আশঙ্কা ভালো। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বব্যাপী চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কায়, যুক্তরাষ্ট্রের তেলের দাম কমে গেছে, যা এপ্রিল ২০২১-এর পর সর্বনিম্ন। এছাড়াও, ট্রেজারি ফলন কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা সরকারি বন্ডের দিকে ঝুঁকছেন। এর ফলে বন্ধকী ঋণ, ক্রেডিট কার্ড এবং গাড়ির ঋণের সুদের হারও কমতে পারে।
তবে, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। আগামী বুধবার থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৯০টি দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারে, যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। এমনটা হলে, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে, বেশ কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যেমন—অটো, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, এবং কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক। এছাড়াও, কাঠ, ওষুধ, তামা ও মাইক্রোচিপের মতো পণ্যের উপরও শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলোই এখন নির্ধারণ করবে বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন