এড শিরানের নতুন গান ‘আজ়িজাম’ – সমালোচকদের চোখে হয়তো তা তেমন কিছু নয়, কিন্তু ইরানীয়দের কাছে অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে এসেছে। গানটি পারস্য সংস্কৃতির প্রতি উৎসর্গীকৃত, যা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ইরানীয়দের মধ্যে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ‘আজ়িজাম’ শব্দের অর্থ “আমার প্রিয়” বা “আমার আদরের” (ফার্সি ভাষায়)।
পশ্চিমা সমালোচকরা গানটিকে সাদামাটা বলছেন। তাদের মতে, গানের সুর তেমন মৌলিক নয়। কিন্তু ইরানীয়দের কাছে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। গানটি তাদের সংস্কৃতি ও ভাষার প্রতি সম্মান জানাচ্ছে, যা তারা সবসময় অনুভব করতে চায়। অনেকেই মনে করেন, পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ইরানকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ‘থ্রি হান্ড্রেড’ (300) সিনেমায় পারসিকদের বর্বর হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবার, ‘আর্গো’ (Argo) সিনেমায় ইরানীদের চরমপন্থী ও অজ্ঞ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একজন শিল্পীর তাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরাটা অনেক বড় বিষয়।
ইরানীয়রা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। তারা প্রায়ই বলে থাকেন, পারস্য বিশ্বের প্রাচীনতম অবিচ্ছিন্ন সভ্যতা। রুমি, হাফেজ, এবং ফেরদৌসীর মতো কবিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছেন। অনেকেই এখনো ফ্রেডি মার্কারিকে নিজেদের একজন হিসেবে মনে করেন (ফারোখ জুন)।
তাঁর বাবা-মা ছিলেন পার্সি, যারা অষ্টম শতকে ইরান থেকে ভারতে এসেছিলেন।
গানটিতে ইরানের সংস্কৃতি ও সঙ্গীতের উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘দাফ’ ও ‘সান্তুর’-এর মতো বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার। জনপ্রিয় শিল্পী আর্শ ও অ্যান্ডির কণ্ঠ গানটিকে আরও বিশেষত্ব দিয়েছে। এমনকি শীঘ্র এই গানের একটি পূর্ণ ফার্সি সংস্করণও প্রকাশিত হবে, যেখানে ইরানের জনপ্রিয় একজন শিল্পী কণ্ঠ দেবেন।
গানটি এমন এক সময়ে মুক্তি পেয়েছে, যখন ইরানে নওরোজ (নববর্ষ) উৎসব চলছিল। নওরোজ হলো নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার উৎসব, যেখানে সবাই একত্রিত হয়, খাবার খায়, উপহার দেয় এবং নাচে-গানে মেতে ওঠে। এই গানটি সারা বিশ্বের ইরানীয় পরিবারগুলোতে বাজানো হয়েছে।
গানের ভিডিওটি মুক্তি পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে প্রায় আট মিলিয়নের বেশি ভিউ হয়েছে। টিকটকে বহু ইরানীকে এই গানের তালে কোমর দোলাতে দেখা গেছে।
তবে, এর চেয়ে গভীর একটি বার্তা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক যতই কঠিন হোক না কেন, সংস্কৃতি এখনো মানুষকে একত্রিত করতে পারে। এর আগে, এড শিরান আফ্রিকার শিল্পী বার্না বয় ও ফায়ারবয় ডিএমএল-এর সঙ্গে কাজ করেছেন। কলম্বিয়ার শিল্পী জে বালভিনের সঙ্গে একটি গানের জন্য তিনি স্প্যানিশও শিখেছিলেন।
কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন, শিরান এইসব করে শুধুমাত্র তার বাজার বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এই ধরনের গানগুলো বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। যেমন, ‘দ্য কেমিক্যাল ব্রাদার্স’-এর ‘গ্যালভানাইজ’, ব্লারের ‘আউট অফ টাইম’ অথবা কোল্ডপ্লের ‘উই প্রে’ গানগুলো এক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে।
এড শিরান বলেছিলেন, ‘আজ়িজাম’-এ ব্যবহৃত মধ্যপ্রাচ্যের বাদ্যযন্ত্রগুলো তাঁর শৈশবের আইরিশ লোকসংগীতের কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি মনে করেন, সংগীতই সবাইকে একত্রিত করে, এটি একটি সার্বজনীন ভাষা।
এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলো, গত সপ্তাহে আমেরিকার একটি পাব-এ সকলে একসঙ্গে ‘আজ়িজাম’ গাইছিল। এমনকি জিমি ফ্যালনও তাঁর ‘দ্য টুনাইট শো’-তে গানটি গেয়েছেন। তাই, সব মিলিয়ে বলা যায়, এড, আপনি আমাদের ‘আজ়িজাম’।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান