আফ্রিকা মহাদেশকে কয়লা ব্যবহারের পক্ষে উৎসাহিত করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এর ফল যে মারাত্মক হতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত তাদের। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আফ্রিকার দেশগুলো এমনিতেই চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার তাদের জন্য আরও বিপর্যয় ডেকে আনবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফ্রিকার দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি, বিশেষ করে কয়লা ব্যবহারের জন্য চাপ দিচ্ছেন। তার যুক্তি হলো, এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, কয়লার ব্যবহার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কার্বন নিঃসরণ বাড়িয়ে এটি জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও ত্বরান্বিত করবে। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বিশ্বে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়েছে, তার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য কয়লাভিত্তিক উন্নয়ন পথ বেছে নেওয়া আত্মঘাতী হতে পারে। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এরই মধ্যে তারা ক্ষতির শিকার হচ্ছে। একটি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান জলবায়ু পরিস্থিতিতে ২১০০ সাল নাগাদ আফ্রিকার দেশগুলোর জিডিপি ৬৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাদের প্রচুর পরিমাণে সৌর ও বায়ু শক্তি উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। মরক্কো, কেনিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো এরই মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে।
তারা সৌর, বায়ু, ভূতাপীয় এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। এটি মানুষের জন্য বিদ্যুতের সহজলভ্যতা বাড়ায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলো তৈরি করা যায়, যা গ্রামীণ বিদ্যুতায়নের জন্য খুবই উপযোগী।
অন্যদিকে, কয়লার কারণে আফ্রিকানদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কয়লাকে সস্তা ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি হিসেবে দেখা হলেও, এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি, স্বাস্থ্য সমস্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিতে হবে।
এছাড়া, বিশ্বজুড়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝোঁক বাড়ছে, তাই কয়লাখাতে বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
আফ্রিকার দেশগুলোকে ট্রাম্পের জীবাশ্ম জ্বালানি সমর্থক গোষ্ঠীর চাপ প্রতিরোধ করতে হবে। তাদের টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যৎ গড়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
এর জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি অবকাঠামো তৈরি করা খুবই জরুরি। এর মধ্যে সৌর পার্ক ও বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং গ্রিড-বহির্ভূত এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।
আফ্রিকার অনেক দেশ এরই মধ্যে স্থানীয় সৌর ব্যবস্থা এবং মাইক্রো গ্রিড স্থাপন করে এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে, তেমনি জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতাও কমানো যাচ্ছে।
সুশাসন ও নীতি কাঠামোর উন্নয়নও গুরুত্বপূর্ণ। আফ্রিকার সরকারগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং স্থিতিশীলতা আনতে তাদের নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব দিতে হবে। জলবায়ু বিষয়ক বিষয়গুলো নতুন প্রকল্পগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় খাতে সম্পদ বরাদ্দ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমর্থনও এক্ষেত্রে অপরিহার্য। বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের ৭০ শতাংশের বেশি নির্গত হয় এমন দেশগুলো ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই ধরনের পদক্ষেপ আফ্রিকার দেশগুলোতে জলবায়ু অর্থায়ন ও প্রযুক্তি আনতে সহায়তা করবে, যা তাদের জ্বালানি সংক্রান্ত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাহায্য করবে।
টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আফ্রিকার দেশগুলোকে নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির দিকে ঝুঁকতে হবে। তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা রয়েছে, যা তাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে সহায়তা করতে পারে।
কয়লার ব্যবহার টিকিয়ে রাখার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের প্রচেষ্টা প্রতিহত করার মাধ্যমে, আফ্রিকার দেশগুলো তাদের জনগণের জন্য একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে পারে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি আফ্রিকার জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারে। তবে, এর জন্য আফ্রিকার নেতাদের এমন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত নয়, যিনি কেবল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর কথা ভাবেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা