ইউরোপের এক বিশাল জলাভূমি, যেখানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে—রোমানিয়ার ড্যানিউব ডেল্টা (Danube Delta)। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে ভালোবাসেন, পাখির কলকাকলিতে মুগ্ধ হন, তাদের জন্য এই জায়গাটি হতে পারে এক দারুণ গন্তব্য।
এখানকার সবুজ প্রকৃতি আর স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা, সব মিলিয়ে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দিতে পারে যা বাংলাদেশের মানুষের কাছেও আকর্ষণীয় হতে পারে।
ড্যানিউব ডেল্টা হলো ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী-অববাহিকা। এটি ইউনেস্কো বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত।
এখানে রয়েছে অসংখ্য প্রজাতির পাখি, যাদের মধ্যে কিছু পরিযায়ীও আসে।
এখানকার বনের গভীরে রয়েছে এক বিশেষ আকর্ষণ—লেটেয়া ফরেস্ট (Letea Forest)। বনের ভেতরের পরিবেশ যেন অন্য এক জগৎ।
পুরনো ওক, সাদা পপলার, আর ছাই গাছের মধ্যে লতাগুল্মের আচ্ছাদন, যা এই বনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
স্থানীয় গাইড ড্যানিয়েল পেত্রেস্কু, যিনি নিজেও এই অঞ্চলের মানুষ, জানান, বনের সৃষ্টিরহস্য আজও অজানা।
কারো মতে, কৃষ্ণ সাগর থেকে বীজ এসেছিল, আবার কারো ধারণা, ড্যানিউব নদী বয়ে এনেছে বিভিন্ন স্থান থেকে বীজ। পাখির মাধ্যমেও অনেক বীজ এখানে আসে।
বনের বালুকাময় ভূমি প্রায় ১৪,০০০ থেকে ১১,০০০ বছর আগে তৈরি হয়েছিল, আর লেটেয়া বনের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৫০০ বছর আগে।
লেটেয়া ফরেস্টের কাছেই রয়েছে লেটেয়া গ্রাম।
এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা বেশ সাদাসিধে। এক সময় এখানকার মানুষজন নৌকার ওপর নির্ভরশীল ছিল।
এখন পর্যটকদের আনাগোনায় তাদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে। পর্যটকদের জন্য এখানে আকর্ষণীয় হলো বনের ভেতরে ঘোরাঘুরি করা, স্থানীয় খাবার উপভোগ করা এবং সেখানকার মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা।
লেটেয়া গ্রামের এক বাসিন্দা, শেফ ভায়োরিকা ম্যাক্সিমের বাড়িতে রয়েছে স্থানীয় খাবারের ব্যবস্থা।
এখানে টাটকা মাছ দিয়ে তৈরি সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়। সাথে থাকে স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি নানান পদ।
তবে, ড্যানিউব ডেল্টার আসল আকর্ষণ হলো এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
এখানে সবুজ বনভূমি, স্বচ্ছ জলের ধারা, আর পাখির কলকাকলি—সবকিছু মিলেমিশে এক অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করে।
এটি বাংলাদেশের সুন্দরবনের মতো বিশাল না হলেও, প্রকৃতির এই রূপ যেকোনো প্রকৃতি প্রেমীর মন জয় করতে পারে।
ড্যানিউব ডেল্টা ভ্রমণের মাধ্যমে একজন পর্যটক প্রকৃতির কাছাকাছি আসার সুযোগ পান, যা বর্তমান ব্যস্ত জীবনে খুবই প্রয়োজনীয়।
সবুজ প্রকৃতি আর স্থানীয় সংস্কৃতির এক চমৎকার মিশ্রণ হলো ড্যানিউব ডেল্টা।
যারা প্রকৃতির নীরবতা ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক