মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ইইউ পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে, ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি ‘শূন্য-থেকে-শূন্য’ শুল্ক প্রস্তাব দিয়েছিল, যা ট্রাম্প প্রশাসন প্রত্যাখ্যান করে।
বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে, আসুন মূল ঘটনাগুলো জেনে নেওয়া যাক।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক আরোপ করার কয়েক সপ্তাহ আগে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গাড়ি ও শিল্প পণ্যের ওপর শুল্ক সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। ইইউ কমিশনার মারোস সেফকোভিচ গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে এই প্রস্তাব দেন।
তাঁর প্রস্তাব ছিল, গাড়ি এবং ওষুধ, রাবার ও যন্ত্রপাতির মতো বিভিন্ন শিল্প পণ্যের ওপর শুল্ক শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হোক।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। উল্টো, ট্রাম্প প্রশাসন ইইউ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইইউ এখন পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইইউ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারে।
এই তালিকায় সম্ভবত হার্লে-ডেভিডসন মোটরসাইকেল, কমলালেবুর রস এবং জিন্সের মতো পণ্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এর ফলে প্রায় ২৬ বিলিয়ন ইউরোর (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি) বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তবে, এই বিষয়ে ইইউ-এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতানৈক্য দেখা যাচ্ছে। কিছু দেশ মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
আবার কোনো কোনো দেশ, বিশেষ করে ফ্রান্স এবং আয়ারল্যান্ড, তাদের বাণিজ্যের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে কিছুটা নরম মনোভাব দেখাচ্ছে। তারা চাইছে, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক।
ইতালির উপ-প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি প্রস্তাব দিয়েছেন, আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইইউ যেন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপের সময়সীমা ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিও এই বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি বৈঠকের আয়োজন করেছেন।
জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক সতর্ক করে বলেছেন, কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হলে তা ইইউ-এর পদক্ষেপকে দুর্বল করে দেবে। তাঁর মতে, “বাজার ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়ছে এবং ক্ষতি আরও বাড়তে পারে। তাই আমাদের স্পষ্ট, দৃঢ় এবং বিচক্ষণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, গত কয়েক দশকের মধ্যে এটি অন্যতম খারাপ পরিস্থিতি।
ট্রাম্পের শুল্কের কারণে ইইউ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া প্রায় ৩৮২ বিলিয়ন ইউরোর (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৬ লাখ কোটি টাকার বেশি) পণ্যের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিষয়টি শুধু ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ।
শুল্ক বাড়লে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের ভোক্তাদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত, তবে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় পিছপা হবে না। বাণিজ্য যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে, বিশ্ব অর্থনীতি নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় দেশগুলোকে কৌশল নির্ধারণ করতে হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান