মন্টেভিডিও: উরুগুয়ের শান্ত, সুন্দর রাজধানী
আর্জেন্টিনার প্রতিবেশী দেশ উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিও, যা পর্যটকদের কাছে এখনো ততটা পরিচিত নয়। তবে যারা একটু ভিন্ন স্বাদের ভ্রমণ ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি হতে পারে দারুণ একটি গন্তব্য।
প্লেট নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরটিতে একদিকে যেমন আছে ঐতিহাসিক স্থাপত্য, তেমনি অন্যদিকে আছে প্রাণবন্ত সংস্কৃতি আর প্রকৃতির ছোঁয়া। বুয়েনস আইরেসের সঙ্গে মন্টেভিডিওর অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়, তবে এর নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একে করেছে আরও আকর্ষণীয়।
শহরের পুরনো অংশটি ‘সুইদাদ ভিএহা’ নামে পরিচিত। একসময় এটি ছিল দেয়াল ঘেরা একটি শহর।
এখন এখানে পুরনো দিনের রাস্তা, সুন্দর স্থাপত্য, আর আকর্ষণীয় সব দেয়ালচিত্র দেখা যায়। কোবলস্টোনের রাস্তা ধরে হেঁটে গেলে যেন অতীতে ফিরে যাওয়া যায়। এখানকার বাড়িগুলোর গায়ে আঁকা বিশাল আকারের ছবিগুলো শহরের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে।
সুইদাদ ভিহার বাইরে, শহরের কেন্দ্রটি আরও আধুনিক। এখানে রয়েছে সরকারি দপ্তর, উনিশ শতকের প্রাসাদ, জাদুঘর এবং ইন্ডিপেনডেন্সিয়া প্লাজা।
এই এলাকার দোকানগুলোতে কেনাকাটারও সুযোগ রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্বে সমুদ্রের ধার ঘেঁষে রয়েছে ‘রাম্বলা’ নামের একটি রাস্তা, যা প্রায় ১৪ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত।
এই রাস্তায় হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে ভ্রমণ করা বেশ উপভোগ্য। এখানকার সমুদ্রসৈকতগুলোতে, বিশেষ করে পসিটোস, বুসেও এবং মালভিনের মতো জায়গাগুলোতে আধুনিক অ্যাপার্টমেন্টগুলো যেন সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে, যা শহরটিকে একটি সুন্দর সমুদ্র উপকূলের রূপ দেয়।
মন্টেভিডিও শুধু সুন্দর শহরই নয়, এটি সংস্কৃতিরও এক উজ্জ্বল কেন্দ্র। ইউনেস্কো একে সাহিত্য নগরীর মর্যাদা দিয়েছে।
এখানে রয়েছে অনেক সুন্দর, স্বতন্ত্র বইয়ের দোকান। এখানকার সঙ্গীত ঐতিহ্যও বেশ সমৃদ্ধ। এই শহর টাঙ্গো নৃত্যের অন্যতম জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত।
উনিশ শতকের শেষের দিকে শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে এর উদ্ভব হয়, যেখানে আফ্রিকান, আদিবাসী এবং ইউরোপীয় সংস্কৃতির মিশ্রণ দেখা যায়।
বর্তমানে, এখানে টাঙ্গো উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন ক্লাব, ক্লাস এবং অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও, মন্টেভিডিওর সংস্কৃতিতে কান্দোমবে-র একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। এটি মূলত মুক্তিপ্রাপ্ত আফ্রিকান ক্রীতদাসদের বংশধরদের সংস্কৃতি থেকে এসেছে এবং ইউনেস্কো একে মন্টেভিডিওর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কান্দোমবে-র মূল আকর্ষণ হলো পিয়ানো, রিপিক এবং চিকো নামের তিনটি ড্রাম। এখানকার রাস্তায় সারা বছরই এর পরিবেশনা দেখা যায়, তবে জানুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে কার্নিভালের সময় এর বিশেষ আয়োজন হয়, যা শহরটিকে আরও উৎসবমুখর করে তোলে।
২০৩০ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের উদ্বোধনী ম্যাচ মন্টেভিডিওতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই কারণেও শহরটি এখন বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করছে।
দর্শনীয় স্থানসমূহ
খাবার
থাকবার জায়গা
কেনাকাটা
রাতের বেলা
স্থানীয়দের মতো
মন্টেভিডিও একটি অসাধারণ শহর, যেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং প্রকৃতির এক সুন্দর মিশ্রণ রয়েছে। যারা নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক