যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে। বন্যার পানি এখনো অনেক জায়গায় বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে এই অঞ্চলে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যেতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলবে।
কেনটাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেসিয়ার সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “এই রাতটি খুবই বিপদজনক হতে পারে। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেলে, যারা জলমগ্ন এলাকায় বসবাস করছেন, তাদের হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি রয়েছে।” তিনি ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত কয়েক দিন ধরে চলা এই অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে শুধুমাত্র কেনটাকি নয়, টেনিসি, আরকানস, ইন্ডিয়ানা এবং মিসৌরিসহ বিভিন্ন রাজ্যেও বন্যা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, গত ৩০শে মার্চ থেকে শুরু হওয়া এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ১৫৭টি টর্নেডো আঘাত হানে।
বন্যার কারণে অনেক শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কেনটাকি এবং টেনিসির বিভিন্ন স্থানে উদ্ধারকর্মীরা এখনো জীবন বাঁচানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বন্যার কারণে টেক্সাস থেকে ওহাইও পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ফ্রাঙ্কফোর্টে কেন্টাকি নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি চলে আসায় সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
কেনটাকি রাজ্যের ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ডিস্টিলারি (মদ প্রস্তুতকারক কারখানা) বানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া, রাজ্যের ৫০০টির বেশি রাস্তা এখনো বন্ধ রয়েছে।
ফ্রাঙ্কফোর্টের কাছে একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া একদল আরভি (ভ্রাম্যমাণ বাড়ি) পার্কের ব্যবস্থাপক ট্র্যাসি ইয়োডার জানান, আকস্মিক বন্যায় তাদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে হয়েছে। “সবার আগে আমরা নিশ্চিত করি যেন সবাই নিরাপদে স্থান ত্যাগ করতে পারে।”
বন্যার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টেনিসি। এখানে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেনটাকিতে মারা গেছে ৪ জন।
এদের মধ্যে ৯ বছর বয়সী এক শিশু স্কুলের বাসে যাওয়ার সময় বন্যায় ভেসে যায়। আরকানসাসে ৫ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যখন একটি গাছ তাদের বাড়ির উপর ভেঙে পড়েছিল। এছাড়া, মিসৌরির ১৬ বছর বয়সী এক দমকলকর্মী ঝড়ের সময় উদ্ধার কাজে গিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হন।
কেনটাকি নদীর পানি সোমবার ফ্রাঙ্কফোর্ট লক-এ ১৪.৭১ মিটার (৪৮.২৭ ফুট) পর্যন্ত উঠেছিল, যা ১৯৭৮ সালের ১০ই ডিসেম্বরের রেকর্ড ১৪.৮ মিটারের (৪৮.৫ ফুট) কাছাকাছি। গভর্নর বেসিয়ার জানিয়েছেন, এক হাজারের বেশি মানুষ এখনো জল সরবরাহ থেকে বঞ্চিত এবং প্রায় ৩,০০০ মানুষকে ফুটিয়ে পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ফ্রাঙ্কফোর্টের বাসিন্দা ৭৮ বছর বয়সী রাসেল হ্যারড জানান, তিনি ৪০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন, কিন্তু এমন ভয়াবহ বন্যা আগে দেখেননি। তিনি বলেন, “আমি আগে এমন দেখিনি।”
আরকানসাসের গভর্নর সারা হাকাবি স্যান্ডার্স হার্ডি শহরের পরিস্থিতিকে “হৃদয়বিদারক” বলে অভিহিত করেছেন। ওয়েস্ট মেমফিস ফায়ার চিফ বারি ইলি জানিয়েছেন, তাদের কর্মীরা ১০০ জনের বেশি মানুষকে উদ্ধার করেছেন।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, উষ্ণ তাপমাত্রা, অস্থির বায়ুমণ্ডল, শক্তিশালী বাতাস এবং উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসা প্রচুর জলীয় বাষ্পের কারণে এই ভয়াবহ আবহাওয়া দেখা দিয়েছে। তারা আরও বলেছেন, যদিও দক্ষিণাঞ্চলীয় সমভূমি এবং মিসিসিপি, টেনিসি ও ওহাইও উপত্যকায় বৃষ্টি কমেছে, তবে অধিকাংশ নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপরে রয়েছে।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কিছু ছোট নদীর পানি কমতে শুরু করবে।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।