মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতি কঠোর করার অংশ হিসেবে, মুখ ঢাকা ফেডারেল এজেন্টদের দ্বারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আটকের ঘটনা নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কর্মীদের আটকের ঘটনাগুলো ইতোমধ্যে আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক মহলে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের ফলে কর্মকর্তাদের পরিচয় গোপন রাখার বিষয়টি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা এবং তাদের আচরণের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
সম্প্রতি, সাদা পোশাকে থাকা ফেডারেল এজেন্টদের মুখ ঢেকে শিক্ষার্থীদের আটক করার দৃশ্য দেখা গেছে, যা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত। এই ধরনের পদক্ষেপের কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে প্রকাশ হয়ে যাওয়া এবং তাদের উপর হামলার আশঙ্কাই এর মূল কারণ।
তবে, সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের কৌশল মূলত কর্তৃত্ববাদী শাসনের একটি বৈশিষ্ট্য, যেখানে নাগরিকদের উপর নজরদারি ও তাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত, তদন্তের স্বার্থে আন্ডার কভার এজেন্টরাই কেবল মুখ ঢেকে থাকেন। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের এমন পদক্ষেপের ফলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
তাদের মতে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের পরিচয় গোপন করা হলে, আটকের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাছাড়া, বিক্ষোভের সময় মুখোশ পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের দ্বিচারিতা গুরুতর উদ্বেগের কারণ।
আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন তুরস্কের নাগরিক রুয়েসা ওজতুর্ক। তিনি ম্যাসাচুসেটস-এর টাফটস ইউনিভার্সিটির পিএইচডি শিক্ষার্থী। এছাড়া, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালেস্টাইনপন্থী অ্যাক্টিভিস্ট মাহমুদ খলিলকেও আটক করা হয়েছে।
মাহমুদ খলিলের আইনজীবী এই আটকের তীব্র নিন্দা করে একে বাক-স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তর (Department of Homeland Security) বলছে, তাদের কর্মকর্তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সন্ত্রাসী সন্দেহে থাকা ব্যক্তিদের থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করেন।
তবে, আইনজীবীরা মনে করেন, কর্তৃপক্ষের এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের মতে, ভিসাধারী শিক্ষার্থীদের আটকের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন। কারণ, এর ফলে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো রাতে মুখোশ পরে হাজির হওয়ার মতো পরিস্থিতির দিকে চলে যেতে পারে।
সাবেক সরকারি কর্মকর্তারাও বলছেন, কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু এর অজুহাত দিয়ে কর্তৃপক্ষের এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়। তাদের মতে, এই ধরনের কার্যকলাপ কর্তৃপক্ষের ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং সমাজে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের এই অভিবাসন নীতির ফলে আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তি এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আইনজীবীরা কাজ করছেন। একই সাথে, এই ধরনের বিতর্কিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কিভাবে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়েও তারা পরামর্শ দিচ্ছেন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন