পুরুষের নিঃসঙ্গতা ঘোচাতে পাখির বন্ধুত্বের গল্প: সিনেমার পর্দায় এক নতুন দিগন্ত। সিনেমার জগৎ সবসময়ই আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি।
আর সেই প্রতিচ্ছবিতে মাঝে মাঝে এমন কিছু গল্প উঠে আসে যা আমাদের মনকে নাড়া দিয়ে যায়। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া পিটার ক্যাটানিও পরিচালিত ‘দি পেঙ্গুইন লেসনস’ তেমনই একটি সিনেমা।
টম মিশেলের স্মৃতিচারণমূলক বই অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমাটিতে এক শিক্ষকের জীবনে একটি পেঙ্গুইনের আগমন কীভাবে তার জীবন বদলে দেয়, সেই গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সিনেমাটির প্রেক্ষাপট ১৯৭৬ সালের আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক অস্থিরতা। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র টম মিশেল (স্টিভ কোগান), একজন শিক্ষক, যিনি একাকী জীবন কাটান।
একদিন উরুগুয়ের সমুদ্র সৈকতে তেল-চিটচিটে একটি ম্যাগেলান পেঙ্গুইনকে (পাখি) খুঁজে পান তিনি। প্রথমে, এক নারীর মন জয় করার উদ্দেশ্যে পেঙ্গুইনটিকে নিজের কাছে রাখেন টম।
কিন্তু সেই নারী চলে যাওয়ার পর পেঙ্গুইন জুয়ান সালভাদরের সঙ্গেই তার নতুন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে জুয়ানের প্রতি আকৃষ্ট হন টম।
জুয়ান সালভাদর শুধু একটি পাখি ছিল না, সে টমের একাকিত্ব দূর করার এক দারুণ সঙ্গী হয়ে ওঠে। টমের ছাত্র এবং সহকর্মীরাও জুয়ানের সান্নিধ্যে আসে এবং তাদের জীবনেও পরিবর্তন আসে।
পেঙ্গুইনটির প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং যত্ন দেখে টম নতুন করে জীবনকে আবিষ্কার করেন। সিনেমার গল্পে দেখা যায়, জুয়ান সবার কাছে ভালো শ্রোতা ছিল।
সবাই তার কাছে তাদের মনের কথা বলত, যেন সে তাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু।
পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং তাদের জীবনে পশুপাখির গুরুত্ব নিয়ে মনোবিদদের গবেষণা রয়েছে। মনোবিদ ড. ক্রিস ব্লাজিনার মতে, অনেক পুরুষ তাদের মানবিক সম্পর্কের চেয়ে পোষা প্রাণীর সঙ্গে সম্পর্ককে বেশি নিরাপদ মনে করেন।
কারণ, সমাজে পুরুষদের আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু বাধা থাকে। পোষা প্রাণীর সঙ্গে সম্পর্ক তাদের সেই বাধা ভাঙতে সাহায্য করে।
সিনেমাতে প্রায়ই দেখা যায়, পুরুষ এবং কুকুরের মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। ‘জন উইক’ সিরিজের মতো সিনেমাগুলো পুরুষ এবং কুকুরের সম্পর্কের গভীরতা তুলে ধরেছে।
এছাড়াও, ‘দ্য কল অফ দ্য ওয়াইল্ড’ এবং ‘হাচি: এ ডগ’স টেল’-এর মতো সিনেমাগুলোতেও প্রাণীদের প্রতি মানুষের ভালোবাসার এক অসাধারণ চিত্র ফুটে উঠেছে।
তবে, সিনেমার জগতে শুধু কুকুরই নয়, অন্যান্য প্রাণীও মানুষের একাকিত্ব ঘোচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বানর নিয়ে তৈরি সিনেমাগুলোও দর্শকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।
এই ধরনের সিনেমাগুলো আসলে সমাজের প্রতিচ্ছবি, যেখানে মানুষ এবং পশুর পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়।
‘দি পেঙ্গুইন লেসনস’ সিনেমাটি সেই গল্পগুলির মধ্যে অন্যতম, যা আমাদের দেখায়, কীভাবে একটি প্রাণী মানুষের জীবনে বন্ধু হয়ে আসে এবং একাকিত্ব দূর করতে সাহায্য করে।
এই ধরনের সিনেমাগুলো আমাদের মনে গভীর রেখাপাত করে এবং ভালোবাসার গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।