**ব্রাজিলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ, জলবায়ু সম্মেলনে তাদের কণ্ঠস্বর আরও জোরালো করার আহ্বান**
ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ। দেশটির আদিবাসী সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের ঐতিহ্যবাহী ভূমি অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।
এই প্রতিবাদ কর্মসূচী একইসঙ্গে আসন্ন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলন, যা ‘কপ-৩০’ নামে পরিচিত, সেখানে তাদের আরও বেশি অংশগ্রহণের সুযোগের দাবি জানাচ্ছে। আগামী নভেম্বরে আমাজন অঞ্চলের বেলেমে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এই বিক্ষোভ ছিল ‘ফ্রি ল্যান্ড ইন্ডিজিনাস ক্যাম্প’-এর ২১তম বার্ষিকীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বিক্ষোভকারীরা ‘ভূমি অধিকার = জলবায়ু পদক্ষেপ’ -এর মতো বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে শহরের কেন্দ্রস্থল থ্রি পাওয়ার্স স্কয়ারের দিকে এগিয়ে যায়। এই স্থানটিতে কংগ্রেস, সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ অবস্থিত।
আন্দোলনকারীদের মতে, আদিবাসী ভূমিগুলো এখনও তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় রয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আমাজনের অরণ্য রক্ষার মাধ্যমে তারা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার কমাতে সহায়তা করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগের প্রথম শিকারও হচ্ছে তারাই।
উদাহরণস্বরূপ, আমাজনের আমাপার লুয়েন কারিপুনা জানান, তাদের এলাকার প্রধান খাদ্যশস্য কাসাভার ফলন সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে।
বর্তমানে ব্রাজিলের মোট ভূখণ্ডের ১৩ শতাংশ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, যার অধিকাংশই আমাজন অঞ্চলে অবস্থিত।
বিগত দুই বছরে, আমাজন অববাহিকা অঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ খরা দেখা দিয়েছে, যার ফলে দাবানল বৃদ্ধি, নদী তীরবর্তী জনপদগুলোতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, শস্যহানি এবং বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই অঞ্চলের চরম আবহাওয়ার কারণ জলবায়ু পরিবর্তন।
আদিবাসী নেতারা চান, কপ-৩০ সম্মেলনে ভূমি চিহ্নিতকরণ এবং অন্যান্য অধিকারের বিষয়গুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব পাক।
ইকুয়েডরের আদিবাসী নেতা এবং ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অফ টেরিটোরিয়াল কমিউনিটিজ’-এর নির্বাহী সচিব জুয়ান কার্লোস জিনটিয়াচ বলেন, “সামাজিক আন্দোলনের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক কপ।
আদিবাসী হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
গত বছর, আদিবাসী সম্প্রদায় কপ-৩০ এর সহ-সভাপতি পদে মনোনয়ন চেয়েছিল, যা প্রত্যাখ্যাত হয়।
তবে, ব্রাজিলের জলবায়ু বিষয়ক সচিব আন্দ্রে করেয়া দো লাগো আদিবাসী নেতৃত্বের একটি ফোরাম তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা ঐতিহ্যগত জ্ঞানকে বিশ্বব্যাপী কাজে লাগাতে সহায়তা করবে।
তবে আদিবাসী সংগঠনগুলো এখনো লাগো-র এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে।
আর্টিকুলেশন অফ ইন্ডিজিনাস পিপলস অফ ব্রাজিলের সমন্বয়কারী দিনামাম তুক্সা বলেন, “কপ এমন একটি রাজনৈতিক মঞ্চ যেখানে দেশগুলো জলবায়ু সংকট নিয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হয়, কিন্তু দুঃখজনকভাবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে আলোচনায় সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।
অথচ, আমরাই এই অঞ্চলের প্রধান রক্ষক এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে লড়াই করছি।
স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আমাজনের আদিবাসী ভূমিগুলোতে বনভূমি ধ্বংসের হার অনেক কম।
উল্লেখ্য, আমাজন পৃথিবীর বৃহত্তম বৃষ্টি-অরণ্য এবং এটি জলবায়ু নিয়ন্ত্রক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও, পৃথিবীর প্রায় ২০ শতাংশ স্বাদু পানির উৎসও এই অঞ্চলে অবস্থিত।
আমরা মনে করি, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে, বিশ্বজুড়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও তাদের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানের প্রতি সম্মান জানানো জরুরি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।