টাইটানিক: জাহাজের ডুবন্ত মুহূর্তের নতুন চিত্র, থ্রিডি স্ক্যানে উদ্ভাসিত।
এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজের মর্মান্তিক পরিণতি আজও মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করে। এবার সেই ট্র্যাজেডির এক নতুন দিক উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
সম্প্রতি, গভীর সমুদ্রের একটি কোম্পানি, ম্যাগেলান, টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের থ্রিডি স্ক্যান তৈরি করেছে। এই স্ক্যানের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে জাহাজের একটি ডিজিটাল প্রতিরূপ, যা এর ভেতরের অনেক অজানা তথ্য সামনে এনেছে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর তথ্য অনুযায়ী, এই ডিজিটাল মডেলটি টাইটানিকের সবচেয়ে নির্ভুল চিত্র, যা “রিভেট পর্যন্ত” নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলে।
১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল, টাইটানিক যখন তার প্রথম যাত্রা করছিল, তখন এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রী জাহাজ। কিন্তু নিয়তির পরিহাস, যাত্রা শুরুর চার দিনের মাথায়, গভীর রাতে এক বিশাল বরফখণ্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সেটি ডুবে যায়।
এই দুর্ঘটনায় দেড় হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। বেঁচে ফিরেছিলেন মাত্র সাতশোর বেশি যাত্রী।
নতুন এই থ্রিডি স্ক্যান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে “টাইটানিক: দ্য ডিজিটাল রিসারেকশন” নামের একটি তথ্যচিত্র।
এই ছবিতে জাহাজের শেষ মুহূর্তগুলো নতুন করে তুলে ধরা হয়েছে, যা এতদিন ধরে চলে আসা অনেক ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে।
তথ্যচিত্রের বিশ্লেষণে অংশ নিয়েছেন টাইটানিক বিশেষজ্ঞ পার্কস স্টিফেনসন, ধাতুবিদ জেনিফার হুপার এবং মাস্টার মেরিনার ক্রিস হিয়ার্ন।
বিশেষজ্ঞরা খুঁজে পেয়েছেন এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যা আগে জানা ছিল না।
তাদের মতে, ইঞ্জিন রুমের কর্মীরা জাহাজটি ডুবতে শুরু করার পরেও দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাদের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন।
তারা হয়তো নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, যাতে জাহাজের অন্যান্য যাত্রীদের সাহায্য করা যায়।
এছাড়াও, জাহাজের কাঠামো ভেঙে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কেও নতুন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, টাইটানিক দুটি অংশে বিভক্ত হয়নি, বরং এটি ভয়ংকরভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
এই স্ক্যানিংয়ের ফলে টাইটানিকের ফার্স্ট অফিসার উইলিয়াম মারডকের সম্মানও পুনরুদ্ধার হয়েছে।
আগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তিনি তার দায়িত্ব পালন করেননি।
কিন্তু নতুন স্ক্যানে লাইফবোট নামানোর সরঞ্জামের অবস্থান দেখে বোঝা যায়, মারডক সম্ভবত যাত্রীদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করার সময় সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিলেন।
ম্যাগেলানের এই থ্রিডি স্ক্যানিং শুধু টাইটানিকের ভেতরের অজানা তথ্যই উন্মোচন করেনি, বরং এটি ভবিষ্যতের জন্য জাহাজটিকে সংরক্ষণেও সাহায্য করবে।
ডিজিটাল মডেলটি ২০২২ সালে টাইটানিকের যেমন অবস্থা ছিল, সেই অবস্থাই অক্ষুণ্ণ রাখবে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক জানিয়েছে, এই ডিজিটাল প্রতিরূপ “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টাইটানিকের ইতিহাসকে সুরক্ষিত করবে এবং আন্ডারওয়াটার আর্কিওলজিতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।”
“টাইটানিক: দ্য ডিজিটাল রিসারেকশন” তথ্যচিত্রটি ১১ এপ্রিল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এ এবং ১২ এপ্রিল থেকে ডিজনি+ ও হুলু-তে দেখা যাবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন