মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন ফিলিস্তিনি ছাত্রকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ খলিলের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, সরকার বলছে, তার রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে তাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে।
খবরটি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একটি স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, মাহমুদ খলিলের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার কারণে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে, বিশ্বজুড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যে নীতি, তা দুর্বল হয়ে পড়ছে।
একইসঙ্গে, ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা করার যে চেষ্টা, তাতেও ব্যাঘাত ঘটছে।
মামলার শুনানিতে বিচারক সরকারের কাছে খলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ চেয়েছিলেন। এর জবাবে সরকার এই স্মারকলিপি জমা দেয়। যদিও এতে খলিলের কোনো অপরাধমূলক কাজের উল্লেখ নেই।
মাহমুদ খলিল একজন স্থায়ীভাবে বসবাসকারী এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ছাত্র। গত বছর ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণ এবং গাজায় যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভের সময় তিনি ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন।
খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, সরকার মাহমুদ খলিলের ফিলিস্তিন বিষয়ক মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করতে চাইছে। তারা আরও বলেন, “মাহমুদকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে নেওয়ার পর, অভিবাসন কর্তৃপক্ষ অবশেষে স্বীকার করেছে যে তাদের কাছে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা আদালতে প্রমাণ জমা দিয়েছেন, তবে আদালতের নথিপত্র জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়।
খলিলের জন্ম সিরিয়ায়, তিনি ফিলিস্তিনের নাগরিক। গত ৮ মার্চ নিউ ইয়র্কে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনি লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী আছেন।
খুব শীঘ্রই তার স্ত্রীর একটি সন্তান জন্মগ্রহণের কথা রয়েছে, যিনি একজন মার্কিন নাগরিক।
কারাগার থেকে পাঠানো এক চিঠিতে মাহমুদ খলিল অভিযোগ করেছেন, তাকে “সরকারের ভিন্নমত দমনের বৃহত্তর কৌশলের অংশ” হিসেবে নিশানা করা হচ্ছে।
তিনি তার মুক্তির জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছেন, যাতে তিনি সন্তানের জন্ম দেখতে পারেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো স্মারকলিপিতে আরও কিছু নথির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন ‘মাহমুদ খলিলের প্রোফাইল’ এবং স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের একটি চিঠি। তবে খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, সরকার সেগুলো আদালতে জমা দেয়নি।
মার্কিন সরকার সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে। তারা বলছে, ক্যাম্পাসগুলোতে ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই এই পদক্ষেপ। তবে সমালোচকদের মতে, এটি আসলে মুক্তভাবে কথা বলার অধিকার খর্ব করার চেষ্টা।
একইসঙ্গে, ইসরায়েলের সমালোচনা করায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করার ঘটনাও ঘটছে।
মাহমুদ খলিলকে গ্রেফতারের সময়, স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের একজন মুখপাত্র অভিযোগ করেছিলেন যে খলিল হামাসের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত হামাসের সঙ্গে খলিলের কোনো যোগসূত্র প্রমাণ করতে পারেনি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।