ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে চীন, জাপান ও ইইউ সম্পর্ক নিয়ে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক ক্যাবিনেট বৈঠকে চীন, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সম্পর্ক নিয়ে বেশ কিছু মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করেছেন। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ট্রাম্পের এই দাবিগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
উদাহরণস্বরূপ, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি ধরা যাক। ট্রাম্প দাবি করেছেন, বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীনের এক ট্রিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত রয়েছে। তবে সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে পণ্য ও সেবার বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬৩ বিলিয়ন ডলার।
এমনকি শুধু পণ্যের বাণিজ্য হিসাব ধরলেও এই ঘাটতি ২৯৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল না। ট্রাম্পের আমলে ২০১৮ সালে এই ঘাটতি সর্বোচ্চ ৪১৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।
চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্কের বিষয়েও ট্রাম্প ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন, তার আমলে চীনের শুল্কের কারণে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে শত শত বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে।
বাস্তবে, এই শুল্ক পরিশোধ করে মার্কিন ব্যবসায়ীরা, চীন নয়। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, ট্রাম্পের আমলে চীনের ওপর আরোপিত শুল্কের বোঝা প্রধানত বহন করতে হয়েছে মার্কিন ভোক্তাদের।
জাপানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির বিষয়েও ট্রাম্পের দাবি সঠিক নয়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জাপানের নিরাপত্তা দেয় এবং এর জন্য ‘শত শত বিলিয়ন ডলার’ খরচ করে, কিন্তু জাপান কোনো অর্থ দেয় না।
প্রকৃত ঘটনা হলো, জাপান প্রতি বছর মার্কিন সামরিক উপস্থিতির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা করে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির জন্য প্রায় ১২.৬ বিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ এবং অন্যান্য সহায়তা দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) গঠন সম্পর্কে ট্রাম্পের ধারণা নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে’ ইইউ গঠিত হয়েছিল।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর কোনো ভিত্তি নেই। তাদের মতে, ১৯৫০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে একটি যৌথ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইইউ গঠিত হয়েছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্য বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে পশ্চিম ইউরোপকে স্থিতিশীল ও সুরক্ষিত করা।
ট্রাম্পের শাসনামলে মূল্যস্ফীতি নিয়েও তিনি ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, তার সময়ে কোনো মূল্যস্ফীতি হয়নি। যদিও বাস্তবে, তার শাসনামলে মূল্যস্ফীতি ছিল এবং প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষের দিকে তা প্রায় ৮ শতাংশে পৌঁছেছিল।
এছাড়াও, অভিবাসন, কারাগার এবং মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বিষয়ক তার কিছু দাবিও সঠিক নয়। ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেন, অন্যান্য দেশের সরকারগুলো তাদের কারাগার, মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো খালি করে সেই সব অঞ্চলের লোকজনদের জো বাইডেনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে।
তবে এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি বিশ্বজুড়ে কারাগারের সংখ্যাও বাইডেন সরকারের সময়ে কমেছে এমন কোনো তথ্য নেই।
সবশেষে, সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের বিষয়েও ট্রাম্পের দাবি অতিরঞ্জিত। তিনি বলেছিলেন, তার প্রথম মেয়াদে তিনি ‘৫৭১ মাইল সীমান্ত প্রাচীর’ তৈরি করেছেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, তার সময়ে নির্মিত প্রকৃত প্রাচীরের পরিমাণ ছিল ৪৫৮ মাইল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন