উগান্ডায় ২০২৬ সালের নির্বাচনে আবারও প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির বিরোধী দলের নেতা ও সঙ্গীতশিল্পী ববি ওয়াইন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট, দীর্ঘদিনের শাসক ইউওয়েরি মুসেভেনির বিরুদ্ধে লড়বেন তিনি। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে ববি ওয়াইন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি এখনও জীবিত এবং কারাগারে বন্দী না থাকলে এই নির্বাচনে অংশ নেবেন।
ববি ওয়াইনের আসল নাম রবার্ট কিয়াগুলানি সেন্টামু। তিনি ন্যাশনাল ইউনিটি প্ল্যাটফর্ম (NUP) দলের প্রধান। গার্ডিয়ানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও তিনি পিছপা হবেন না, কারণ দেশের তরুণ সমাজ পরিবর্তনের জন্য মুখিয়ে আছে।
ববি ওয়াইন মনে করেন, “আমরা মুসেভেনির কাছে এমনিতেই নির্বাচন ছেড়ে দিতে পারি না।”উগান্ডার ৮০ শতাংশ মানুষের বয়স ৩৫ বছরের নিচে।
ববি ওয়াইন মনে করেন, তরুণ প্রজন্মের এই আকাঙ্ক্ষা থেকেই পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, “তরুণরা খুব আশাবাদী, কারণ তারা পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছে। জনগণের ভালো ইচ্ছাই এই নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
মুসেভেনি ১৯৮৬ সাল থেকে উগান্ডার ক্ষমতায় আছেন। আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি সপ্তম বারের মতো প্রেসিডেন্ট হতে চাইছেন। এর আগে ২০২১ সালের নির্বাচনে কারচুপি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল।
এমনকি নির্বাচনের সময় ববি ওয়াইনকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল এবং তিনি হামলা ও প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছিলেন।
ববি ওয়াইন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, নির্বাচনটি রক্তাক্ত হতে পারে। তিনি বলেন, “আমি ভবিষ্যতের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ হতে চলেছে। এরই মধ্যে আমরা তার কিছু ইঙ্গিত পাচ্ছি।
গত মাসে একটি উপনির্বাচনে আমার দলের একজন সংসদ সদস্য নিহত হয়েছেন, যিনি ক্ষমতাসীন দলের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।”
ববি ওয়াইনের প্রধান প্রতিপক্ষদের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রেসিডেন্ট মুসেভেনির ছেলে, মুহুজি কাইনারুগাবা। কাইনারুগাবাকে তার বাবা সেনাবাহিনীর প্রধান করেছেন। তিনি ‘প্যাট্রিয়টিক লীগ অব উগান্ডা’রও প্রধান।
ববি ওয়াইনকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছেন কাইনারুগাবা।
ববি ওয়াইন বলেন, “আমি নিশ্চিত, বিশ্ব যদি আমাদের পাশে থাকে, তাহলে ২০২৬ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের বছর হতে পারে। যদি বিশ্বনেতারা নিপীড়নের পক্ষে না দাঁড়িয়ে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ান।”
ববি ওয়াইন মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গণতন্ত্রের চেয়ে কূটনীতি এবং অধিকারের চেয়ে ব্যবসার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “সহায়তা হ্রাস উগান্ডার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
স্বাস্থ্যখাতে সহায়তা কমে যাওয়ায় আমরা কম ওষুধ এবং বেশি বুলেট পাব।”
উগান্ডার দুর্নীতি নিয়েও তিনি কথা বলেন। ববি ওয়াইন বলেন, প্রতি বছর ১০ ট্রিলিয়ন উগান্ডান শিলিং (প্রায় ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার) দুর্নীতিতে চলে যায়। তিনি বলেন, “দুর্নীতিমুক্ত হলে আমরা প্রতিটি খাতে কাজ করতে পারব, যা আমাদের দারিদ্র্য ও ঋণ থেকে মুক্তি দেবে।”
ববি ওয়াইনের স্ত্রী, বার্বি ইতঙ্গো কিয়াগুলানি, ২০১৬ সালের নির্বাচনে স্বামীর প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাদের সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে ‘ববি ওয়াইন: দ্য পিপলস প্রেসিডেন্ট’ নামক অস্কার মনোনয়ন পাওয়া একটি চলচ্চিত্রে।
ববি ওয়াইন বলেন, “যারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেন, তারা এটি বেছে নেন না, বরং এটি তাদের ওপর ঘটে। আমার জীবন ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে গান করতে ভালো লাগে, কিন্তু কোনো উপায় নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আমি জানি না, আগামী সপ্তাহে আমি কারাগারে থাকব কিনা। যদি আমি এই বছর শেষেও জীবিত থাকি এবং কারাগারে না যাই, তবে আমি আবারও প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করব।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান