নিউ ইয়র্কের হাডসন নদীতে একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় স্প্যানিশ পরিবারের তিনজন সদস্যসহ মোট ছয়জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন জার্মানির বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিমেন্সের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা, তাঁর পরিবার এবং হেলিকপ্টারের পাইলট। বৃহস্পতিবার ম্যানহাটনের আকাশপথে পরিবারটির একটি আনন্দভ্রমণের সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হেলিকপ্টারটি নিউ জার্সির উপকূলের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কয়েকবার উল্টে যায় এবং এর কিছু অংশ ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার কারণ এখনো জানা যায়নি, তবে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এবং ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন সিমেন্সের নির্বাহী কর্মকর্তা আগুস্তিন এসকোবার এবং তাঁর পরিবার। নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও এই ঘটনাকে ‘অকল্পনীয় ট্র্যাজেডি’ হিসেবে বর্ণনা করে শোক প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় সময় বেলা ২টা ৫৯ মিনিটে ম্যানহাটনের একটি হেলিপোর্ট থেকে হেলিকপ্টারটি ওড়ে। এটি স্ট্যাচু অফ লিবার্টির চারপাশে উড়ে যাওয়ার পর হাডসন নদী ধরে উত্তরে এবং পরে জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিজের দিকে যাচ্ছিল। এরপর নিউ জার্সির উপকূল ধরে দক্ষিণে যাওয়ার সময় বেলা ৩টা ১৭ মিনিটের দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এটি নদীতে পড়ে যায়।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, হেলিকপ্টারটি ছিল বেল-২০৬এল-৪ লংরেঞ্জার IV মডেলের। ২০০৪ সালে তৈরি হওয়া এই হেলিকপ্টারটির ২০১৬ সালে এয়ারওয়ার্থিনেস সার্টিফিকেট ছিল, যা ২০২৯ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল। তবে এই হেলিকপ্টারটির রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু সমস্যা ছিল।
এর আগে, ২০১৫ সালে এই হেলিকপ্টার পরিচালনাকারী একটি কোম্পানির পাইলট জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং ২০১৩ সালেও একই কোম্পানির একজন পাইলট ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ম্যানহাটনের কাছে একটি নদীতে জরুরি অবতরণ করেছিলেন।
এফএএ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মে মাসে এই হেলিকপ্টারের টেল রোটর ড্রাইভ শ্যাফটে পরীক্ষার প্রয়োজন ছিল এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এর প্রধান রোটর ব্লেডেও কিছু ত্রুটি দেখা দেয়। দুর্ঘটনার তদন্তে এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৬ জনকে জল থেকে উদ্ধার করেন। এদের মধ্যে ৪ জনকে ঘটনাস্থলেই মৃত ঘোষণা করা হয় এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও ২ জনের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার তদন্ত এখনো চলছে এবং তদন্তকারীরা হেলিকপ্টারটির কারিগরি ত্রুটি ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন