ইউরোপের ঘরবাড়িতে কীটনাশকের ‘বিষাক্ত ককটেল’, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মানুষ
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মানুষের ঘরবাড়িতে প্রায় ২০০ রকমের কীটনাশকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাসায়নিক মিশ্রণ এবং পরিবেশের উপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলি বিবেচনা করতে হবে।
নেদারল্যান্ডসের রাডবাউড ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস (Radboud Institute for Biological and Environmental Sciences)-এর অধ্যাপক পল স্খিপার্স এই গবেষণা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে ১০টি ইউরোপীয় দেশের ঘরবাড়ির ধুলোয় এই কীটনাশকগুলি পাওয়া গেছে। কীটনাশকগুলির মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি মানুষের শরীরে ক্যান্সার এবং হরমোন-সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি করতে পারে।
প্রতিটি বাড়িতে ২৫ থেকে ১২১ রকমের কীটনাশক পাওয়া গেছে। কৃষকদের বাড়িতে কীটনাশকের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল।
অধ্যাপক স্খিপার্স বলেন, “বহু গবেষণায় দেখা গেছে কীটনাশকের মিশ্রণ বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।” তিনি আরও জানান, বাইরে থেকে জুতা, পোষা প্রাণী এবং বিভিন্ন বাজার থেকে আনা পণ্যের মাধ্যমে কীটনাশকগুলো ঘরে প্রবেশ করে।
ঘরের ভেতরে কীটনাশক প্রবেশের কারণ হিসেবে অধ্যাপক স্খিপার্স জুতার মাধ্যমে আসা ধুলোবালি, পোষা প্রাণীর শরীর এবং তাদের চিকিৎসা ও সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত কীটনাশক এবং গৃহস্থালীর বিভিন্ন সামগ্রীর কথা উল্লেখ করেন।
বাজারে পাওয়া যাওয়া অনেক পণ্যেও কীটনাশক থাকে। এমনকি, পুরনো কীটনাশক, যেমন ডিডিটি-ও পরিবেশে এখনো বিদ্যমান।
১৯৭২ সালে কিছু দেশে ডিডিটি নিষিদ্ধ করা হলেও, এটি সহজে পরিবেশে ধ্বংস হয় না।
গবেষকরা বলছেন, কীটনাশকের এই মিশ্রণগুলো স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত কীটনাশকের ব্যবহার এবং অনুমোদনের আগে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এবং অন্যান্য রাসায়নিকের সঙ্গে বিক্রিয়াগুলো বিবেচনা করা।
এছাড়া, পিএফএএস (PFAS) নামক রাসায়নিকের কথাও বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন, যা “চিরকালের রাসায়নিক” নামে পরিচিত। এগুলো পরিবেশে সহজে মিশে যায় না এবং বিভিন্ন ক্যান্সারসহ গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে।
অধ্যাপক স্খিপার্স আরও বলেন, “ডিডিটির মতো দীর্ঘকাল ধরে নিষিদ্ধ হওয়া রাসায়নিকগুলো এখনো পরিবেশে পাওয়া যায়। একইভাবে পিএফএএস-এর ক্ষেত্রেও একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে।” ভবিষ্যতে হয়তো অন্যান্য টেকসই রাসায়নিকের ক্ষেত্রেও এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গবেষকরা মনে করেন, এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ কীটনাশকের মিশ্রণগুলি পরীক্ষা করতে পারে এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা মিশ্রণগুলোর পরীক্ষাও করতে পারে।
এছাড়াও, নতুন কীটনাশকের ঝুঁকি মূল্যায়নের সময় পুরনো কীটনাশকের সঙ্গে তাদের বিক্রিয়াগুলোও বিবেচনা করা উচিত।
তথ্য সূত্র: The Guardian