অনলাইনে ভয়ংকর ফাঁদ: কিশোর মনে জঙ্গিবাদের বীজ বুনছে সন্ত্রাসীরা।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে, যেখানে ইন্টারনেট হাতের মুঠোয়, সেখানেই লুকিয়ে আছে বিপদ। অল্প বয়সীদের মনকে টার্গেট করে জঙ্গি সংগঠনগুলো অনলাইনে তাদের ঘৃণ্য প্রচার চালাচ্ছে।
উদ্বেগের বিষয় হলো, এই ফাঁদে পা দিচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা, যাদের বয়স মাত্র ১২ থেকে ১৫ বছর।
সম্প্রতি, এমন একটি ঘটনার কথা জানা গেছে যেখানে ১২ বছর বয়সী এক ফরাসি কিশোর অনলাইনে নৃশংস ভিডিও দেখে এবং জঙ্গিবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠে। তার মা জানতেন না যে ছেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘরে বসে ভিডিও গেম খেলছে না, সে আসলে অনলাইনে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও বোমা তৈরির কৌশল শিখছে।
পরে ওই কিশোরকে আটক করা হয় এবং তার কাছ থেকে কয়েক টেরাবাইট ডেটা উদ্ধার করা হয়, যেখানে বোমা তৈরির ভিডিও সহ জঙ্গি সংশ্লিষ্ট নানান উপকরণ ছিল।
ফরাসি প্রসিকিউটর পল-এডওয়ার্ড লালোয়া জানিয়েছেন, ওই কিশোরের মধ্যে চরমপন্থী ধারণা এতটাই গেঁথে গিয়েছিল যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তার কয়েক বছর সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের ঘটনাগুলো শিশুদের মানসিকতাকে সম্পূর্ণভাবে বদলে দিতে পারে। অল্প কয়েক বছরেই তারা সহিংস হামলা চালানোর মতো মানসিকতা তৈরি করতে পারে।”
শুধু ফ্রান্স নয়, ইউরোপ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা এখন জঙ্গিবাদের শিকার হচ্ছে।
ফ্রান্সে, ২০২১ সালে যেখানে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত ছিল ২ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক, সেখানে ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে এবং গত বছর তা ১৯ জনে পৌঁছেছে।
“ফাইভ আইস” (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড)-এর মতো গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
তারা মনে করে, “কিশোর-কিশোরীরা প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই সন্ত্রাসী হুমকি তৈরি করতে পারে।” জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কিশোরদের সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছে।
অস্ট্রিয়ায়, আইএসআইএস-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ এবং ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরকে আটক করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের অনলাইনে জঙ্গিবাদের দিকে আকৃষ্ট করতে কয়েক মাস সময়ই যথেষ্ট। তারা খুব সহজেই অভিভাবকদের নজর এড়িয়ে যায়।
এই বিষয়ে ফরাসি আইনজীবীর কামেল আইসাওয়ি বলেন, “ছেলেটি এক সাইট থেকে অন্য সাইটে যেত এবং এমন কিছু জিনিস দেখত যা তার দেখা উচিত ছিল না।” বর্তমানে ওই কিশোরকে বিশেষ তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে, যেখানে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশাধিকার নেই।
এই বিষয়ে ফ্রান্সের সন্ত্রাস দমন বিভাগের প্রধান অলিভিয়ার খ্রিস্টেন বলেন, “জঙ্গি সংগঠনগুলো খুব ভালোভাবেই এই বয়সের ছেলেমেয়েদের টার্গেট করছে।”
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। শিশুদের অনলাইন কার্যক্রমের উপর নজর রাখা এবং তাদের উপযুক্ত গাইডেন্স দেওয়া উচিত।
একইসঙ্গে, সরকার ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকেও এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম এই ধরনের বিপদ থেকে দূরে থাকতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস