পুরুষদের বন্ধুত্বের পথে অন্তরায় ও তা দূর করার উপায়।
পুরুষদের জীবনে বন্ধুত্বের গুরুত্ব অপরিসীম, তবে অনেক সময় এই সম্পর্কগুলো গভীরতা পায় না।
পাশ্চাত্যের অনেক দেশে পুরুষদের মধ্যে বন্ধুত্বের গভীরতা নিয়ে গবেষণা হলেও, আমাদের দেশেও এর প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে পুরুষদের মধ্যে কিছু সাধারণ সমস্যা দেখা যায়, যা তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে বাধা দেয়।
আসুন, সেই সমস্যাগুলো এবং তা থেকে উত্তরণের উপায়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
বন্ধুত্বের পথে প্রধান অন্তরায়।
পুরুষদের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে প্রথম বাধা হলো, নিজেদের অনুভূতির কথা প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করা। সমাজ আমাদের এমনভাবে তৈরি করে যে, পুরুষরা তাদের দুর্বলতা প্রকাশ করবে না।
বন্ধুদের সাথে নিজেদের ভালো লাগা বা খারাপ লাগার কথা বলতে তারা সঙ্কোচ বোধ করে। বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসা বা তাদের গুরুত্ব বোঝাতেও অনেক সময় তারা কুণ্ঠাবোধ করে।
ভাইয়ের মতো বন্ধুত্বের গুরুত্ব।
নরওয়ের নাগরিক এবং ‘ব্রাদার্স’ নামক একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কিম ইভেন্সেন মনে করেন, গভীর বন্ধুত্ব তৈরি করতে হলে, পুরুষদের প্রচলিত কিছু ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ইভেন্সেন পুরুষদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তার মতে, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোটা শুধুমাত্র “আড্ডা” বা “একসাথে ব্যায়াম করা”-র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলে না।
সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে আরও কিছু করার প্রয়োজন।
পুরুষদের বন্ধুত্বে সমাজের প্রভাব।
সমাজ অনেক সময় পুরুষদের বন্ধুত্বের ধারণাটিকে হালকা করে দেয়। বন্ধুদের সাথে “ফর্মাল” সম্পর্ক বজায় রাখার প্রবণতা দেখা যায়, যেখানে গভীর আবেগ বা অঙ্গীকারের অভাব থাকে।
বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর ক্ষেত্রে সমাজের চাপ থাকে, যা সম্পর্কের গভীরতা কমিয়ে দেয়।
পুরুষত্ব ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, পুরুষদের মধ্যে “পুরুষত্ব” প্রমাণের একটা প্রবণতা দেখা যায়। বন্ধুদের মাঝে নিজেদের “পুরুষ” হিসেবে প্রমাণ করার জন্য তারা বিভিন্ন কাজ করে থাকে।
মনোবিজ্ঞানী ড. রবার্ট গারফিল্ডের মতে, এই ধরনের মানসিকতা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের পথে বাধা সৃষ্টি করে। কারণ, এর ফলে পুরুষরা তাদের দুর্বলতা, আবেগ বা ভালোবাসার মতো বিষয়গুলো প্রকাশ করতে ভয় পায়।
বন্ধুত্বে ভালোবাসার ভুল সংজ্ঞা।
ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বের মাঝে বিদ্যমান সম্পর্কের সংজ্ঞা অনেক সময় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। এর কারণে পুরুষরা তাদের বন্ধুদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে দ্বিধা বোধ করে।
তারা ভয় পায়, তাদের সম্পর্ক নিয়ে অন্যেরা ভুল ধারণা করতে পারে। ইভেন্সেনের মতে, ভালোবাসার ভুল ধারণার কারণে পুরুষরা তাদের বন্ধুদের প্রতি তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না।
রোমান্টিক সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের ভারসাম্য।
যখন একজন পুরুষের জীবনে একজন নারী আসে, তখন বন্ধুদের সাথে তার সম্পর্কের পরিবর্তন হয়। অনেক সময় দেখা যায়, পুরুষরা তাদের বন্ধুদের থেকে দূরে সরে যায় এবং ভালোবাসার সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেয়।
তবে, এটা বন্ধুত্বের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের মনে রাখতে হবে, সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে বন্ধু এবং ভালোবাসার মানুষের প্রতি সমান মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
উপসংহার।
পুরুষদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব তৈরি করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সমাজের প্রচলিত ধারণাগুলো থেকে বেরিয়ে আসা, নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করতে শেখা এবং বন্ধুদের প্রতি আন্তরিক হওয়া।
বন্ধুত্বের গুরুত্ব অনুধাবন করে, সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে কাজ করা উচিত।
তথ্য সূত্র: CNN