যুক্তরাষ্ট্রে হাম রোগ নির্মূল হওয়ার ঘোষণা এসেছিল ২০০০ সালে, কিন্তু সম্প্রতি টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে এর পুনরায় বিস্তার দেখা দিয়েছে। টিকাদান কর্মসূচিতে পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাবে এই রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাবে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা উদ্বেগের কারণ।
টেক্সাসের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, টিকাদান কর্মসূচিগুলি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দীর্ঘদিন ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় কিছু অতিরিক্ত তহবিল পাওয়া গেলেও, তা দীর্ঘদিনের ঘাটতি পূরণ করতে যথেষ্ট ছিল না। ফলে, টিকাকরণের হার কমে গেছে, যা হামের মতো রোগের প্রাদুর্ভাবের অন্যতম কারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাম প্রতিরোধের জন্য শিশুদের টিকাদান অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের টিকা দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। এমনকি, যারা টিকা নেওয়ার যোগ্য, তাদের মধ্যেও টিকা গ্রহণে অনীহা দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাক-বিদ্যালয়গামী শিশুদের মধ্যে ৯২.৭ শতাংশ তাদের প্রয়োজনীয় টিকা গ্রহণ করেছে, যেখানে রোগ প্রতিরোধের জন্য এই হার ৯৫ শতাংশের উপরে থাকা প্রয়োজন।
টেক্সাসের মেননন সম্প্রদায়ে টিকা গ্রহণে অনীহা দেখা যায়। তবে, এই প্রাদুর্ভাব দ্রুত অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে টিকাকরণের হার কম। এর কারণ হলো, টিকাদান কর্মসূচিগুলোতে অর্থায়ন কমে যাওয়া।
যেমন, টেক্সাসের একটি শহর, লুবকের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের টিকাদান কর্মসূচির জন্য স্থানীয় সরকার থেকে যে তহবিল আসে, তা গত ১৫ বছরে বাড়েনি। বর্তমানে এই তহবিল দিয়ে একজন নার্স, প্রশাসনিক সহকারী এবং সামান্য কিছু আনুষঙ্গিক খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে। অথচ একসময় এই তহবিলে তিনজন নার্স, বিজ্ঞাপন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রচারমূলক সামগ্রী কেনার মতো সুযোগ ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে টিকাদান কর্মসূচিগুলি মূলত ফেডারেল, রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের যৌথ অর্থায়নে চলে। কিন্তু তহবিলের অভাবে স্বাস্থ্য বিভাগগুলি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। অনেক জায়গায় কর্মীদের বেতন দেওয়া, টিকাদান কেন্দ্র পরিচালনা এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি, ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে টিকাদান কর্মসূচির জন্য বরাদ্দকৃত তহবিলে কাটছাঁট করা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
অর্থের অভাবে অনেক জায়গায় টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্যখাতে গুরুতর প্রভাব ফেলছে। ডালাস কাউন্টিতে ৫০টির বেশি টিকাদান কর্মসূচি বাতিল করতে হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যেও একই ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টিকাদান কর্মসূচির দুর্বলতা এবং টিকা গ্রহণে মানুষের অনীহার কারণে হামসহ অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব আরও বাড়তে পারে। তাই, টিকাদান কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রতিবেদন।