ঘুমের অভাব: আপনার শরীরে নীরব ঘাতক!
আজকাল ঘুমের অভাব একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আমাদের অজান্তেই শরীরের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম পাওয়া, কাজে মনোযোগের অভাব অথবা সামান্যতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া—এগুলো সবই ঘুমের অভাবের লক্ষণ হতে পারে।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিনের (American Academy of Sleep Medicine) মতে, ঘুমের এই ঘাটতি শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
ঘুম কম হলে শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্কের কার্যকারিতাতেও এর প্রভাব পরে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, “আমি তো ঠিকই আছি”, কিন্তু আসলে আপনার ভেতরের অবস্থা ততটা স্বাভাবিক নাও থাকতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হওয়া এবং এমনকি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। ঘুমের এই সময়টুকু আমাদের শরীরকে পুনরায় সক্রিয় করে তোলে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে।
কিন্তু যখন ঘুম কম হয়, তখন শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, এমনকি স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
আপনি কি জানেন, ঘুমের অভাবে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়? অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণে অনেক সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
গাড়ী চালানোর সময় এমনটা হলে তা খুবই বিপদজনক। তাই, ঘুমের অভাব হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
তাহলে, বুঝবেন কীভাবে যে আপনার ঘুমের অভাব হচ্ছে? এর জন্য ‘এপওয়ার্থ স্লিপিনেস স্কেল’ (Epworth Sleepiness Scale) ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই স্কেলে কিছু সাধারণ প্রশ্ন থাকে, যেমন—দুপুরের খাবার খাওয়ার পর চুপ করে বসে থাকলে ঘুম আসে কিনা, কোনো মিটিংয়ে বসে ঘুমিয়ে যান কিনা, বই পড়ার সময় ঘুম পায় কিনা ইত্যাদি।
এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের মাধ্যমে আপনার ঘুম কতটা প্রয়োজন, তা বোঝা যেতে পারে।
ঘুমের অভাবের আরও কিছু কারণ রয়েছে। অনিদ্রা, ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট (স্লিপ অ্যাপনিয়া), অস্থির পা সিন্ড্রোম, অথবা ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ-এগুলোও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
এছাড়া কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাসও ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফিন গ্রহণ, রাতে মদ্যপান এবং ঘুমের আগে ধূমপান করা ঘুমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, ঘুমের সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে এবং ঘুমের সঠিক নিয়ম মেনে চলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে পারি। মনে রাখতে হবে, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন