যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর: গনোরিয়া চিকিৎসার দিশা দেখাচ্ছে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক।
বিশ্বজুড়ে বাড়ছে যৌনরোগের প্রকোপ। এর মোকাবিলায় চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত নতুন পথ খুঁজে চলেছে।
সম্প্রতি, গনোরিয়া (Gonorrhea) রোগের চিকিৎসায় একটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের (Antibiotic) সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা ১৯৯০ দশকের পর এই রোগের চিকিৎসায় একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনতে পারে।
নতুন এই অ্যান্টিবায়োটিকের নাম হলো ‘গেপোটাইডাসিন’ (Gepotidacin)।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, গেপোটাইডাসিন একটি নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, যা মহিলাদের মূত্রনালীর সংক্রমণ (Urinary Tract Infection – UTI) নিরাময়ে কার্যকর।
এটি গনোরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধেও কাজ করতে পারে। বর্তমানে, গনোরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকগুলির কার্যকারিতা কমে আসছে, কারণ এই জীবাণুগুলির মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের (Antimicrobial Resistance) প্রবণতা বাড়ছে।
ফলে গেপোটাইডাসিন এই ক্ষেত্রে নতুন আশা জাগাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (Food and Drug Administration – FDA) ইতিমধ্যে গেপোটাইডাসিনকে মহিলাদের মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই) এর চিকিৎসার জন্য অনুমোদন দিয়েছে।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে (Clinical Trial) দেখা গেছে, গেপোটাইডাসিন বর্তমান প্রচলিত চিকিৎসার মতোই কার্যকর।
বর্তমানে গনোরিয়ার চিকিৎসায় সেফট্রিয়াক্সোন (Ceftriaxone) ইনজেকশন এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ওষুধ একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়।
গেপোটাইডাসিন এক্ষেত্রে মুখ দিয়ে খাওয়ার ওষুধ হওয়ায় রোগীদের জন্য এটি অনেক বেশি সুবিধাজনক হতে পারে।
গনোরিয়া একটি যৌনরোগ, যা ‘নিসেরিয়া গনোরিই’ (Neisseria gonorrhoeae) নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়।
এই রোগের চিকিৎসা না করা হলে তা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি প্রজনন অঙ্গে সংক্রমণ (Pelvic Inflammatory Disease – PID) ঘটাতে পারে, যা বন্ধ্যাত্ব ও গর্ভধারণে জটিলতা বাড়ায়।
পুরুষদেরও বিরল ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি যৌনরোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।
সেখানকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (Centers for Disease Control and Prevention – CDC) -এর তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ক্ল্যামাইডিয়া (Chlamydia), গনোরিয়া এবং সিফিলিস (Syphilis) – এই তিনটি রোগের সংক্রমণ প্রায় ৯০ শতাংশ বেড়েছে।
গেপোটাইডাসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, মেক্সিকো, স্পেন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৬০০ জনের বেশি রোগীর উপর চালানো হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, গেপোটাইডাসিন বর্তমান চিকিৎসার মতোই কার্যকর এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণের বিরুদ্ধেও এটি কাজ করতে সক্ষম।
গেপোটাইডাসিন গ্রহণকারী ৯২.৬% রোগীর গনোরিয়া সেরে গেছে, যেখানে সেফট্রিয়াক্সোন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে এই হার ছিল ৯১.২%
গবেষকরা বলছেন, গেপোটাইডাসিন গনোরিয়ার চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
তবে, ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কিছু ক্ষেত্রে হালকা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা (যেমন – বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া) দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গনোরিয়ার চিকিৎসায় নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে জীবাণুগুলি ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে, যা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
গেপোটাইডাসিনের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে, ভবিষ্যতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
গেপোটাইডাসিন যদি গনোরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পায়, তবে তা রোগীদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।
ওষুধটি সহজলভ্য হলে, গনোরিয়ার চিকিৎসায় নতুন আশা জাগানো যাবে, যা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন