প্রযুক্তি ব্যবহারের সাথে স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি কম থাকার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে, এমনটাই জানাচ্ছে নতুন একটি গবেষণা। সম্প্রতি প্রকাশিত এই গবেষণায় প্রযুক্তি ব্যবহারের ভালো দিকের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যা বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে।
গবেষণাটি মূলত ডিজিটাল ডিমেনশিয়া হাইপোথিসিসকে চ্যালেঞ্জ জানায়। এই ধারণা অনুযায়ী, প্রযুক্তির ওপর অতি নির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা দুর্বল করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে একটি মেটা-বিশ্লেষণ করেছেন।
এতে বিভিন্ন গবেষণার তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং এই গবেষণাটি ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশতা বা ডিমেনশিয়া (dementia) হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৪২ শতাংশ পর্যন্ত কম থাকে। কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ইমেল, সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি এখানে বিবেচনা করা হয়েছে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ছিল ৬৮ বছর।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেল মেডিকেল স্কুলের নিউরোলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. জ্যারেড বেঞ্জ এবং বেয়লর ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান ও নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক ড. মাইকেল স্কালিন।
গবেষণায় ব্যবহৃত ৫৭টি সমীক্ষায় মোট ৪,১১,৪৩০ জন বয়স্ক মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
তবে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফলাফলগুলো সবসময় একরকম পাওয়া যায়নি। গবেষকরা বলছেন, এই গবেষণা প্রযুক্তির নির্বিচার ব্যবহারের পক্ষে কথা বলে না।
বরং এটি ইঙ্গিত দেয়, যারা ইন্টারনেট তৈরি করেছেন, তারা তাদের মস্তিষ্কের জন্য এই সরঞ্জামগুলো থেকে কিছু ইতিবাচক সুবিধা খুঁজে পেয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই গবেষণা প্রযুক্তি ব্যবহারের ভালো দিক সম্পর্কে ধারণা দেয়, তবে এর সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।
প্রযুক্তি ব্যবহারের ধরন এবং মস্তিষ্কের ওপর এর নির্দিষ্ট প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বাড়াতে পারেন, সে বিষয়ে আরও সুস্পষ্ট ধারণা দরকার।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির নিউরোলজি ও অপথালমোলজি বিভাগের মেডিকেল ডিরেক্টর ড. অমিত সচদেব বলেন, “কম বয়সে যারা মস্তিষ্কে সক্রিয় ছিলেন, পরিণত বয়সে তাদের মস্তিষ্ক বেশি স্থিতিশীল থাকে।”
গবেষণা বলছে, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। এটি সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে এবং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের সুযোগও বাড়ায়।
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ডিমেনশিয়া হওয়ার একটি কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধের পরামর্শ দিয়েছেন। অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে চোখের সমস্যা বা ঘাড়ে ব্যথার মতো শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
ড. স্কালিন আরও উল্লেখ করেন, বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করা উচিত। এমনকি যাদের স্মৃতিভ্রংশতার সামান্য লক্ষণ দেখা যায়, তাদেরও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা সম্ভব।
সবশেষে, এই গবেষণা বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য প্রযুক্তির উপকারী দিকগুলো তুলে ধরেছে। তবে, এর সঠিক ব্যবহারের জন্য সচেতনতা এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন