সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যেখানে সবকিছুই দ্রুত, সেখানে সুইডেনের একটি টিভি অনুষ্ঠান মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে – ‘দ্য গ্রেট মুজ মাইগ্রেশন’। প্রতি বছর, উত্তর সুইডেনের অরণ্যে “কিং অফ দ্য ফরেস্ট” খ্যাত বিশাল আকারের মুজ (এক ধরনের হরিণ প্রজাতি) -দের ঘুরে বেড়ানো সরাসরি সম্প্রচারিত হয়, যা লক্ষ লক্ষ দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করে।
এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি ‘স্লো টিভি’র একটি উদাহরণ। স্লো টিভি হল এমন এক ধরনের টেলিভিশন প্রোগ্রামিং, যেখানে কোনো সাধারণ ঘটনা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে, এমনকি দিনের পর দিন ধরে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সাধারণত, এতে কোনো কাটছাঁট বা ভাষ্য থাকে না।
দর্শকদের উদ্দেশ্যে কেবল প্রকৃতির নীরব দৃশ্যগুলো তুলে ধরা হয়। ‘দ্য গ্রেট মুজ মাইগ্রেশন’-এর ক্ষেত্রে, ক্যামেরাগুলো অ্যাঙ্গারম্যান নদীর তীরে স্থাপন করা হয় এবং মুজদের বার্ষিক স্থানান্তরের দৃশ্য ধারণ করা হয়।
২০১৯ সালে এই অনুষ্ঠানটি যখন প্রথম শুরু হয়, তখন প্রায় দশ লক্ষ দর্শক এটি উপভোগ করেন। সময়ের সাথে সাথে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে, এবং বর্তমানে এসভিটি প্লে-র মাধ্যমে সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানটি প্রায় ৯০ লক্ষ দর্শক উপভোগ করে।
অনুষ্ঠানটির নির্মাতারা জানিয়েছেন, উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে এবার স্থানান্তর প্রক্রিয়া নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হল এর ধীর গতি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি দিনের পর দিন ধরে, মুজদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ক্যামেরাবন্দী করা হয়। আপাতদৃষ্টিতে, এখানে তেমন কোনো ঘটনা ঘটে না, কিন্তু দর্শকদের জন্য এটাই এর সৌন্দর্য।
একদিকে যেমন এটি দর্শকদের প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে আসে, তেমনই তাদের মনে আনে এক শান্ত ও স্নিগ্ধ অনুভূতি।
অনুষ্ঠানটির বিপুল সংখ্যক ভক্ত রয়েছেন, যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই সম্প্রচার দেখেন। কেউ কেউ তো মুজের ছবিওয়ালা খেলনা সংগ্রহ করেন। এই অনুষ্ঠান তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দেয় এবং প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে সাহায্য করে।
অনুষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত কর্মীরাও এর শান্ত প্রভাব থেকে বাদ যান না। এসভিটির প্রজেক্ট ম্যানেজার জোহান এরহাগের মতে, “যারা এর সাথে কাজ করেন, তাদের স্বাভাবিক মানসিক চাপ কমে যায়।
আসলে, সুইডিশ জনগণের কাছে মুজ সবসময়ই বিশেষ আকর্ষণীয়। বনের রাজা হিসাবে পরিচিত এই প্রাণীগুলো সাধারণত লাজুক এবং একা থাকতে পছন্দ করে। তাই, তাদের জীবনযাত্রা ক্যামেরাবন্দী করে সরাসরি সম্প্রচার করা দর্শকদের জন্য এক বিরল অভিজ্ঞতা।
বর্তমানে, এই অনুষ্ঠানটি সুইডেনের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রকৃতির এই নীরব রূপ দর্শকদের মনে গভীর রেখাপাত করে, যা আধুনিক জীবনের কোলাহল থেকে তাদের দূরে রাখে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস