যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের মধ্যে বর্তমানে উদ্বেগ বাড়ছে। এর কারণ হল, যারা নিয়মিত কর পরিশোধ করে আসছেন, তাদের তথ্য এখন ব্যবহার করা হতে পারে তাদের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা (আইআরএস) এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ডিএইচএস) মধ্যে একটি ডেটা শেয়ারিং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি ভীতি তৈরি হয়েছে।
অনেকে মনে করছেন, এত দিন ধরে কর দেওয়ার ফলে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য এখন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে এবং এর ফলস্বরূপ তাদের বিতাড়িত করা হতে পারে।
জানা গেছে, আইআরএস এবং ডিএইচএস-এর মধ্যে হওয়া ১৫ পৃষ্ঠার সমঝোতা স্মারকের কিছু অংশ গোপন রাখা হয়েছে। এর ফলে, আইআরএস ঠিক কী ধরনের তথ্য সরবরাহ করবে, তা স্পষ্ট নয়।
তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ডিএইচএস-এর কাছে এমন করদাতাদের নাম ও ঠিকানা চাওয়া হবে, যাদের ফেডারেল অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। এরপর আইআরএস সেই তথ্য যাচাই করে দেখবে।
ফ্লোরিডা ইমিগ্র্যান্ট কোয়ালিশনের প্রতিনিধি আদ্রিয়ানা রিভেরা জানিয়েছেন, অনেক অভিবাসী এখন ভীত হয়ে পড়েছেন। তাদের মনে হচ্ছে, তারা যেন বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছেন।
রিভেরার মতে, “আমরা বছরের পর বছর ধরে আমাদের সম্প্রদায়ের উন্নয়নে অবদান রেখেছি। এখন যদি এমন হয় যে, আমরা যে পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছি, সেটাই আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাহলে এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়।”
আইনজীবী নেইল ওয়াইনরিব জানিয়েছেন, তিনি বিগত কয়েক দশকে অভিবাসন বিষয়ক আইন নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তার কাছে আসা ইমেইলের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
তার মক্কেলরা এখন চরম উদ্বেগে রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “এই চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে।”
এই চুক্তির ফলে অভিবাসীদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি হয়েছে। তারা এখন জানতে চাইছেন, কর দেওয়া চালিয়ে যাওয়া উচিত কিনা।
কারণ, তারা জানেন যে কর দেওয়াটা তাদের কর্তব্য এবং এর গুরুত্বও তারা উপলব্ধি করেন। কিন্তু একইসঙ্গে তাদের মনে এই প্রশ্নও জাগছে যে, তাদের এই কর্তব্য পালনের কারণে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এমনকি জীবনের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীরা প্রতি বছর ফেডারেল, রাজ্য ও স্থানীয় কর বাবদ প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার জমা দেন। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই চুক্তির কারণে আগামী এক দশকে ফেডারেল সরকারের প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, অভিবাসন অধিকার বিষয়ক দুটি সংগঠন এরই মধ্যে এই চুক্তির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে। তাদের যুক্তি হল, অভিবাসন বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য কর সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা বেআইনি।
তাদের মতে, আইআরএস অন্য কোনো সংস্থাকে করদাতার তথ্য দিতে পারে না, যদি না আদালত থেকে সে বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম জানিয়েছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে তার বিভাগ অপরাধীদের খুঁজে বের করতে পারবে। তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আমেরিকানদের নিশ্চিত হওয়া উচিত যে তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে এবং এই চুক্তি বিশেষভাবে সহিংসতা ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হবে।”
অন্যদিকে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই নতুন নীতির কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাতে পারে। ইয়েল ল’ স্কুলের অধ্যাপক নাতাশা সারিন বলেছেন, “এই ধরনের পদক্ষেপের কারণে মানুষের মধ্যে আইআরএস-এর সঙ্গে তথ্য শেয়ার করা এবং সামগ্রিকভাবে কর ব্যবস্থার প্রতি সন্দেহ বাড়ছে।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন