ভেনেজুয়েলার অর্থনীতিতে ফের সংকট, মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রার অবমূল্যায়ন চরম আকার ধারণ।
ভেনেজুয়েলার অর্থনীতিতে আবারও গভীর সংকট দেখা দিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সম্প্রতি ‘অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন। একদিকে যেমন বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি, তেমনই কমছে দেশটির মুদ্রা বলিভারের দাম। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত ভেনেজুয়েলা। কোভিড পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও, তা বেশিদিন টেকেনি। বর্তমানে দেশটির অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে, যা মানুষের ক্রয় ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তেলের রাজস্ব কমে যাওয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাই এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ। মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের কারণে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যা দেশটির অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ভেনেজুয়েলার মুদ্রাস্ফীতি বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের আয় কমে যাওয়া এবং অনেকের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
মারাকাইবো অঞ্চলের মৎস্যজীবীরাও কঠিন পরিস্থিতির শিকার। মাছ ধরতে যাওয়া জেলে এরিক ওজেদা জানান, তার হাতে তেমন কোনো অর্থ নেই। পরিবারের সদস্যদের খাবার যোগাড় করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
আগে, ভেনেজুয়েলার বাজারে মার্কিন ডলারের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এমনকি নিত্যদিনের কেনাকাটায়ও ডলারের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু সরকারের কিছু নীতির কারণে সেই পরিস্থিতি এখন বদলে গেছে।
সরকার একসময় বলিভারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে বাজারে প্রচুর ডলার সরবরাহ করত। কিন্তু সেই পদক্ষেপ বেশিদিন টেকসই হয়নি। বর্তমানে বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে, ফলে কালো বাজারে ডলারের দাম অনেক বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদুরোর পুনরায় নির্বাচিত হওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল এবং তেল রপ্তানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাদুরো জাতীয় পরিষদে জরুরি ক্ষমতা চেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে কর স্থগিত এবং স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া।
তবে, এই অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে ভেনেজুয়েলার অনেক নাগরিকের মধ্যে দেশ ছাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস