শিরোনাম: ডারিয়েন গ্যাপ: অভিবাসন থেকে আয়ের পথ বন্ধ, পানামার আদিবাসী জনপদে চরম দুর্দিন
পানামার দুর্গম ডারিয়েন গ্যাপ অঞ্চলে অভিবাসন একসময় স্থানীয় অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি ছিল। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তনের ফলে সেই আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলস্বরূপ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন এখন চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। খবরটি প্রকাশ করেছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
ডারিয়েন গ্যাপ, কলম্বিয়া ও পানামার সীমান্তবর্তী একটি দুর্গম অরণ্য অঞ্চল, যা অভিবাসীদের কাছে উত্তর আমেরিকায় যাওয়ার একটি প্রধান পথ ছিল। কয়েক বছর আগেও, অর্থনৈতিক সংকট, যুদ্ধ এবং নিপীড়ন থেকে বাঁচতে আসা মানুষেরা এই পথ ব্যবহার করত। এই বিপুল সংখ্যক অভিবাসীর আগমন সেখানকার স্থানীয় অর্থনীতিতে এনেছিল এক নতুন সম্ভাবনা।
স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন, যেমন লুইস ওলেয়া, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছিলেন। তিনি অভিবাসীদের পারাপারের জন্য নৌকা চালাতেন। এর মাধ্যমে তিনি ভালো অর্থ উপার্জন করতেন এবং তার জীবনযাত্রার মানও উন্নত করেছিলেন। ওলেয়া জানান, “আগে আমরা অভিবাসন থেকে ভালো রোজগার করতাম। কিন্তু এখন, সব শেষ।” তিনি তার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করেন, পরিবারের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করেন এবং একটি নতুন বাড়ি তৈরি করেন।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি কঠোর হওয়ার পর পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। সীমান্ত পাড়ি দেওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, স্থানীয় অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে। যারা এতদিন অভিবাসন নির্ভর ছিলেন, তারা এখন নতুন করে বাঁচার পথ খুঁজছেন।
আরেক স্থানীয় নেতা চোলিনো দে গ্রাসিয়া বলেন, “সবচেয়ে খারাপ দিক হলো, অনেকের খাবার পর্যন্ত জোটে না। কোনো আয় নেই, এখানে কোনো বাজারও নেই, তাহলে মানুষ কিনবে কী?”
একসময়, এই অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ ডারিয়েন গ্যাপ পাড়ি দিত। বর্তমানে সেই সংখ্যা এক সপ্তাহে ১০ জনেরও কম। অভিবাসন কমে যাওয়ায় অনেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। আগে যেখানে বোট চালকরা প্রতিদিন প্রায় ৩০০ ডলার (প্রায় ৩৩,০০০ টাকা) আয় করতেন, সেখানে এখন তাদের কোনো রোজগার নেই। পেদ্রো চামি নামের এক ব্যক্তি, যিনি আগে বোট চালাতেন, এখন নদীতে সোনা খোঁজার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “আগে দিনে ২০০ ডলার (প্রায় ২২,০০০ টাকা) পেতাম, এখন একটি টাকাও নেই।”
তবে, এই পরিবর্তনের ফলে কিছু মানুষ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পেরেছেন। জোবিদা কনসেপসিওন নামের এক নারী জানান, তিনি অভিবাসীদের জন্য খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করতেন। সেই আয় থেকে তিনি একটি নতুন খাট, ওয়াশিং মেশিন, রেফ্রিজারেটর এবং ফ্রিজার কিনেছিলেন। তিনি এখন তার ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় করছেন।
ডারিয়েন গ্যাপ অঞ্চলে অভিবাসন কমে যাওয়ায়, সেখানকার মানুষজন এখন নতুন করে তাদের জীবন সাজানোর চেষ্টা করছেন। কেউ আবার পুরনো পেশায় ফিরে যাচ্ছেন, তবে তাদের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস