চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক যখন ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে, ঠিক সেই সময়ে চীন তাদের শীর্ষ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচক হিসেবে নতুন একজনকে নিয়োগ দিয়েছে।
বুধবার দেশটির সরকার জানিয়েছে, ওয়াং শাউওয়েনের স্থলাভিষিক্ত হয়ে এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন লি চেংগাং। উল্লেখ্য, ওয়াং ২০২০ সালের বাণিজ্য চুক্তি আলোচনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
বিশ্বের বৃহত্তম এই দুই অর্থনীতির দেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে শুল্ক নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে, যার ফলশ্রুতিতে এই পরিবর্তন।
যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করার পর থেকেই দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ওপর বর্তমানে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কর ধার্য করা হয়েছে।
অন্যদিকে, অন্যান্য দেশগুলোকে শুল্কের ক্ষেত্রে ৯০ দিনের ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
বুধবারের শুরুতে চীন ঘোষণা করেছে, তাদের অর্থনীতিতে জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে বার্ষিক ৫.৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এর পেছনে শক্তিশালী রপ্তানি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আগামী মাসগুলোতে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে।
২০২৪ সালে চীনের ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধিতেও রপ্তানির একটি বড় ভূমিকা ছিল।
চলতি বছরেও দেশটির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের জবাবে চীনও তাদের দিক থেকে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে।
তারা মার্কিন পণ্য রপ্তানির ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। একইসঙ্গে চীন তাদের বাজারকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মুখপাত্র শেং লাইয়ুন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্বল্প মেয়াদে শুল্কের কারণে চীনের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি হবে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশটির প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করবে না।
আলোচকদের পরিবর্তনের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়, তবে চীনা কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের জবাব দেওয়ার জন্য তাদের হাতে একাধিক বিকল্প রয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে ১.৪ বিলিয়ন ভোক্তার বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপর নির্ভর করা এবং ইউরোপ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো। যদিও চীনের অভ্যন্তরীণ ভোগ এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি, তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের বিকল্প খুঁজে বের করা কঠিন হবে।
চীন বিরল খনিজ পদার্থের রপ্তানির ওপরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
এই খনিজ পদার্থগুলো উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন পণ্য, মহাকাশ উত্পাদন এবং প্রতিরক্ষা খাতে ব্যবহৃত হয়।
নতুন দায়িত্ব পাওয়ার আগে, লি চেংগাং প্রায় সাড়ে চার বছর চীনের হয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন।
এই সংস্থাই বিশ্ব বাণিজ্য পরিচালনা করে এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীনের শুল্ক বিরোধের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এছাড়াও, তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের কার্যালয় এবং সুইজারল্যান্ডের অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় চীনা প্রতিনিধি দলের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাণিজ্যের মন্ত্রকের সহকারী মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও আইন বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।
লি চেংগাং চীনের শীর্ষস্থানীয় পেকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক এবং জার্মানির হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস