**যুক্তরাজ্যে ইস্পাত কারখানার নিয়ন্ত্রণ হাতে নিচ্ছে সরকার, চীন-সংশ্লিষ্ট উদ্বেগের মধ্যে**
যুক্তরাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্পাত কারখানা, যা একসময় দেশটির গর্ব ছিল, তা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সরকার। উত্তর ইংল্যান্ডের স্কানথর্প-এ অবস্থিত এই কারখানার মালিকানা ছিল চীনের একটি কোম্পানির হাতে।
দেশটির সরকার মনে করছে, কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করতে প্রস্তুত ছিল চীনা কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে কারখানাটিকে বাঁচাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এক সময়ের বৃহৎ শিল্প শক্তিধর যুক্তরাজ্য বর্তমানে ইস্পাত উৎপাদনে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। বিশ্ব বাজারের মাত্র ০.৩ শতাংশ ইস্পাত তারা তৈরি করে। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে দেশটি বিপুল পরিমাণ ইস্পাত আমদানি করে।
চীনা কোম্পানি জিংইয়ের অধীনে থাকা স্কানথর্প কারখানায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
জানা গেছে, কারখানাটি দৈনিক প্রায় ৭ লক্ষ পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ কোটি টাকা) লোকসান দিচ্ছিল। যদিও এতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করা হয়েছিল, কিন্তু বাজারের প্রতিযোগিতার কারণে এটি আর লাভজনক ছিল না।
এমন অবস্থায় কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করে উৎপাদন বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছিল।
ব্রিটিশ সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। একদিকে বিশ্বায়নের প্রতি সমর্থন বজায় রাখা এবং অন্যদিকে, বাজারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোকে রক্ষা করা। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে, সরকার একদিকে যেমন চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে, তেমনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে বাঁচাতেও তৎপর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের এই পদক্ষেপের পেছনে জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনার প্রভাব রয়েছে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পনীতি অনুসরণ করে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলীয় নেতারাও অর্থনীতির ক্ষেত্রে নিজস্ব কৌশল গ্রহণের কথা বলছেন।
তারা মনে করেন, বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশকে টিকিয়ে রাখতে শিল্পখাতকে শক্তিশালী করা জরুরি।
তবে, এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাজ্যের চীন নীতিতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অতীতে, যুক্তরাজ্যের নেতারা চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে, চীনা কোম্পানির মালিকানাধীন একটি কারখানার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘটনা, দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এই ঘটনার পর, যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে। বিরোধী দলগুলো সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানাচ্ছে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, সরকার ইস্পাত কারখানার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিলেও, ওয়েলসের পোর্ট ট্যালবট-এর একটি কারখানায় একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার যদি সত্যিই দেশের শিল্পখাতকে বাঁচাতে চায়, তবে তাদের নীতিতে আরও সুসংগত হতে হবে। একইসঙ্গে, অন্যান্য বেসরকারি খাতেও নজর দিতে হবে, যেখানে সংস্কারের প্রয়োজন।
বর্তমানে, ব্রিটিশ সরকার ইস্পাত কারখানাটিকে জাতীয়করণের কথা ভাবছে। যদি তাই হয়, তবে এটি হবে দেশটির অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন