পেরুর সাবেক রাষ্ট্রপতি ওলান্তা উমালাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০০৬ ও ২০১১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের জন্য তিনি অবৈধভাবে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। এই অর্থ পাচারের দায়েই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
উমালার সঙ্গে তাঁর স্ত্রী নাদিন হেরেদিয়াকেও একই অভিযোগে অভিযুক্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আদালতের রায়ে জানা যায়, উমালা ও হেরেদিয়া ব্রাজিলের নির্মাণ সংস্থা ওদেব্রেখট এবং তৎকালীন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের কাছ থেকে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেছিলেন। এই অর্থ তাঁরা তাঁদের নির্বাচনী প্রচারের কাজে ব্যবহার করেন।
পেরুর ইতিহাসে গত দুই দশকে দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড পাওয়া প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে উমালা তৃতীয়। এর আগে আলেহান্দ্রো তোলেদোকে ওদেব্রেখটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এবং আলবের্তো ফুজিমোরিকে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
২০২২ সালে এই মামলার বিচার শুরু হয়। উমালা ও তাঁর স্ত্রীকে ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিচার শুরুর আগে আটক রাখা হয়েছিল, যাতে তাঁরা দেশ ত্যাগ করতে না পারেন।
ওদেব্রেখট একসময় স্বীকার করেছিল যে, তারা পুরো লাতিন আমেরিকাজুড়ে ঘুষ দিয়েছে। ২০১৫ সালে উমালার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়, যদিও এর এক বছর পরই তারা তাদের দুর্নীতির কথা স্বীকার করে।
পেরুর রাজনৈতিক ইতিহাসে ওদেব্রেখট কেলেঙ্কারি ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ২০০১ সাল থেকে পেরুর যেসব প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁদের অধিকাংশই ওদেব্রেখটের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে বিভিন্ন সময়ে আইনি জটিলতায় পড়েছেন।
তোলেদো বর্তমানে কারাগারে বন্দী রয়েছেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পেদ্রো পাবলো কুচিনস্কি গৃহবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।
এছাড়া, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আলান গার্সিয়া ২০১৯ সালে আত্মহত্যা করেন, যখন কর্তৃপক্ষ তাঁকে ওদেব্রেখট থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিল।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ছাড়াও দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কেইকো ফুজিমোরি এবং আরও অনেক প্রাক্তন গভর্নরের বিরুদ্ধেও এই দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে। এই ঘটনাগুলো পেরুর রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তা আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান