ওকলাহোমা সিটি, যুক্তরাষ্ট্র: ১৯৯৫ সালের ১৯শে এপ্রিল, এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল আমেরিকার ওকলাহোমা শহরের আকাশ। একটি ফেডারেল সরকারি ভবনে চালানো হয় এই নৃশংস হামলা, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী হামলায় পরিণত হয়।
একটি ভাড়া করা ট্রাকে করে বিস্ফোরক বোঝাই করে আনা হয়েছিল, যা আলফ্রেড পি. মুররাহ ফেডারেল বিল্ডিংয়ের সামনে রাখা হয়। সেই ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ১৬৮ জন, যাদের মধ্যে ১৯ জন ছিল শিশু।
আহত হয়েছিলেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। ঘটনাটি ছিল সকাল ৯টা ২ মিনিটের সময়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, তা শহরের অনেক দূর থেকেও অনুভূত হয়েছিল।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে যান সেখানকার স্থানীয় সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ভবনটির চারপাশে দ্রুত ছুটে আসে উদ্ধারকারী দল ও জরুরি বিভাগের কর্মীরা।
সেই সময়কার ভয়াবহ দৃশ্যগুলো এখনো অনেকের স্মৃতিতে অমলিন। বিস্ফোরণের পর দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায় সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর সাংবাদিকরা।
তাদের মধ্যে প্রথমজন ছিলেন জুডি গিবস রবিনসন। তিনি জানান, চারিদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর আহত মানুষের আর্তনাদ।
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া মানুষের কান্না হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা করে। আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, আর স্বজনহারাদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ।
এপি-র সাংবাদিকরা দ্রুত খবর সংগ্রহ করে তা বিশ্বজুড়ে তাদের গ্রাহকদের কাছে পাঠাতে শুরু করেন। ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে অনেকেই যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন।
সেই সময়কার ব্যুরো প্রধান লিন্ডেল হাটসন বলেছিলেন, “মনে হচ্ছিল যেন আমার অনেকগুলো হাত দরকার, কিন্তু পর্যাপ্ত ছিল না।” এই ঘটনার একটি মর্মস্পর্শী ছবি তোলেন চার্লস পোর্টার নামের এক ব্যক্তি।
ছবিতে দেখা যায়, এক দমকলকর্মী এক শিশুর নিথর দেহ কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ছবিটি ১৯৯৬ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জেতে, যা এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।
এই বোমা হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এই ঘটনাকে ‘জঘন্য কাপুরুষোচিত কাজ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। সরকার হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
ওকলাহোমা সিটির এই মর্মান্তিক ঘটনা আজও সারা বিশ্বের মানুষের কাছে গভীর শোকের বিষয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস