বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর সদস্য দেশগুলো সম্প্রতি একটি খসড়া ‘মহামারী চুক্তি’ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হল কোভিড-১৯ মহামারীর সময় সংঘটিত ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়া এবং ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য সংকটগুলো সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা।
দীর্ঘদিন ধরে চলা আলোচনা শেষে, এই চুক্তির চূড়ান্ত রূপ আগামী মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক সভায় গৃহীত হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর বিপর্যয়কর অভিজ্ঞতার পর, দেশগুলো ২০২০ সালে ডব্লিউএইচও-কে এই চুক্তির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়।
ডব্লিউএইচও-এর মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস এই চুক্তিকে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, এটি প্রমাণ করে যে বিভক্ত বিশ্বে, দেশগুলো এখনো সাধারণ ভিত্তি খুঁজে বের করতে এবং সম্মিলিতভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম।
এই চুক্তিতে ভাইরাসের নমুনা আদান-প্রদান এবং এর ফলে তৈরি হওয়া পরীক্ষা, ওষুধ ও টিকার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ভাইরাস নমুনা বিনিময়কারী দেশগুলো এইসব সুবিধা পাবে এবং দরিদ্র দেশগুলোতে সরবরাহ নিশ্চিত করতে ডব্লিউএইচও এই ধরনের পণ্যের ২০ শতাংশ পর্যন্ত সংরক্ষণ করবে।
তবে চুক্তির কিছু দুর্বলতাও রয়েছে। সমালোচকদের মতে, চুক্তিটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে দেশগুলোর ওপর তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কোনো দেশ যদি চুক্তিটি মানতে না চায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ কম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাক্তন সদস্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আর্জেন্টিনার এই চুক্তি থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত অনেককে হতাশ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই চুক্তি ভবিষ্যতে মহামারী মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি খুবই জরুরি, কারণ এর মাধ্যমে তারা টিকা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।
কোভিড-১৯ মহামারীর সময় অনেক দরিদ্র দেশকে টিকা পেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল, তাই এই চুক্তির সফল বাস্তবায়ন হলে সেই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হবে।
এই চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া। কোনো দেশের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে, তারা প্রথমে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে আলোচনার চেষ্টা করবে এবং প্রয়োজনে সালিশি বৈঠকের আশ্রয় নিতে পারবে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত কিছু নিয়ম রয়েছে, যা দেশগুলোকে নতুন প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে দ্রুত তথ্য জানানোর কথা বলে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে ইবোলা এবং কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের সময় এই নিয়মগুলো লঙ্ঘন করা হয়েছে।
এই চুক্তি ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং মহামারী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস