রাতের পালায় কাজ করেন? ঘুমের সমস্যা? কিছু জরুরি পরামর্শ!
বর্তমানে, কর্মজীবনের ধরনে এসেছে অনেক পরিবর্তন। আট ঘণ্টা ডিউটির বাইরেও অনেকে বিভিন্ন শিফটে কাজ করেন। রাতের শিফটে কাজ করা, অথবা অনিয়মিত কাজের সময়সূচী ঘুমের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যহানি পর্যন্ত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই, ঘুমের এই সমস্যাগুলো সমাধানে কিছু কার্যকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
আলো ও ঘুমের সম্পর্ক:
আমাদের মস্তিষ্ক আলো দেখলে জেগে থাকার সংকেত পায়। তাই রাতের পালায় কাজ করার সময় দিনের আলো ঘুমের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে, ঘুমের ঘরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করা খুব জরুরি।
ব্ল্যাকআউট পর্দা ব্যবহার করা যেতে পারে, যা সূর্যের আলো প্রবেশ করতে বাধা দেয়। দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় সূর্যের আলো সরাসরি চোখে পড়লে ঘুম আসতে সমস্যা হতে পারে।
রাতের শিফট থেকে ফেরার সময় দিনের আলোতে চোখের সুরক্ষার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করা যেতে পারে।
মেলাটোনিন: ঘুমের সহায়ক না ক্ষতিকর?
আলো ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে বলে অনেকে ঘুমের ওষুধ হিসেবে মেলাটোনিন ব্যবহার করেন। তবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মেলাটোনিন সেবন করা উচিত নয়।
কারণ, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। সম্প্রতি করা কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে উপলব্ধ অনেক মেলাটোনিন সাপ্লিমেন্ট-এ লেবেলে উল্লেখিত পরিমাণের চেয়ে বেশি উপাদান থাকে।
তাই, এই বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ঘুমের সমস্যা সমাধানে মেলাটোনিন ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
ঘুমের রুটিন:
কাজের শিফট যেমনই হোক না কেন, ঘুমের একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করা প্রয়োজন। ছুটির দিনেও এই রুটিন বজায় রাখা ভালো। এতে শরীরের স্বাভাবিক ঘুমের প্রক্রিয়া বজায় থাকে।
অনিয়মিত ঘুমের কারণে ‘সোশ্যাল জেট ল্যাগ’ হতে পারে, যা ঘুমের আরো ক্ষতি করে। ঘুমানোর আগে হালকা কিছু কাজ করা যেতে পারে, যেমন বই পড়া অথবা হালকা গান শোনা।
টিভি দেখা বা মোবাইল ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
ক্যাফিন:
কাজের সময় শরীরে চাঙা অনুভব করার জন্য অনেকেই ক্যাফিনযুক্ত পানীয়ের ওপর নির্ভর করেন। তবে, ঘুমানোর অন্তত ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা আগে ক্যাফিন গ্রহণ করা বন্ধ করা উচিত।
অতিরিক্ত ক্যাফিন ঘুমের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন মানুষের দৈনিক ৪০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফিন গ্রহণ করা উচিত নয়।
অর্থাৎ, প্রায় চার কাপ কফি অথবা দুটি এনার্জি ড্রিংকস-এর বেশি নয়। ঘুমের সমস্যা কমাতে চাইলে ক্যাফিনের পরিমাণ কমানো যেতে পারে।
সহায়তা নিন:
shift-এ কাজ করা কর্মীদের জন্য বন্ধু এবং পরিবারের সাথে স্বাভাবিক সময়ে দেখা করা কঠিন হতে পারে। তাই, সহকর্মীদের সাথে কথা বলে নিজেদের সমস্যার কথা আলোচনা করা যেতে পারে।
যারা একই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের কাছ থেকে মানসিক সমর্থন পাওয়া যেতে পারে।
অন্যান্য বিষয়:
যদি ঘুমের সমস্যা তিন মাসের বেশি স্থায়ী হয়, তবে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই ধরনের সমস্যাকে ‘শিফট ওয়ার্ক ডিসঅর্ডার’ বলা হয়।
যা কর্মক্ষেত্রে আপনার উৎপাদনশীলতা এবং নিরাপত্তার ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। সেইসঙ্গে, এটি হতাশা বা সামাজিক সম্পর্কগুলোতেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
পরিশেষে, ঘুমের সমস্যা সমাধানে উপরের পরামর্শগুলো অনুসরণ করে দেখুন। যদি সমস্যা থেকেই যায়, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন