বাংলাদেশেও বাড়ছে ডায়াবেটিসের প্রকোপ। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ এই নীরব ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত। এমন পরিস্থিতিতে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত দেখাচ্ছে একটি ওষুধ।
মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি এলি লিলি তাদের পরীক্ষামূলক একটি ওষুধ তৈরি করেছে যা ট্যাবলেট আকারে গ্রহণ করা যাবে। কোম্পানিটির দাবি, এই ওষুধটি ডায়াবেটিস রোগীদের ওজন কমাতে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এলি লিলির তৈরি ‘অরফোরগ্লিপরন’ নামের এই ওষুধটি নিয়মিত সেবনের ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। গবেষণায় অংশ নেওয়া রোগীদের গড়পরতা প্রায় ৮ শতাংশ ওজন কমেছে।
এছাড়াও, তাদের এ১সি (A1C) লেভেল, যা গত তিন মাসের গড় রক্তের শর্করার পরিমাণ নির্দেশ করে, তা ১.৩ থেকে ১.৬ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। এই সাফল্যের ফলে ইনজেকশনের পরিবর্তে ট্যাবলেটের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা আরও সহজ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় সাধারণত ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়, যা অনেকের জন্য বেশ কষ্টকর। বাজারে ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসেবে ইতিমধ্যে ‘রিবেলসাস’ নামে একটি ট্যাবলেট পাওয়া যায়, তবে এটি খাবারের আগে সেবন করতে হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে এটি ইনজেকশনের মতো কার্যকর নাও হতে পারে।
এলি লিলির এই নতুন ওষুধটি সেবনের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
এলি লিলি জানিয়েছে, তাদের ওষুধটি ৫৫০ জনের বেশি রোগীর ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে, যারা শুধুমাত্র ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিলেন না, তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধটি বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধটি গ্রহণকারী ৬৪ শতাংশের বেশি রোগীর এ১সি মাত্রা ৬.৫ শতাংশ বা তার নিচে নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, যাদের এ১সি মাত্রা ৬.৫ শতাংশের নিচে থাকে, তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা হয়।
ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ফাইজারও (Pfizer) একই ধরনের একটি ওষুধ তৈরির চেষ্টা করছিল, কিন্তু তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে লিভারের কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় তারা এই প্রকল্প বাতিল করেছে। তবে, এলি লিলি জানিয়েছে, তাদের ওষুধে তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্যাবলেটের মাধ্যমে ওষুধ সেবন করা সহজ এবং এটি রোগীদের জন্য আরও সুবিধাজনক হতে পারে। ইনজেকশনের তুলনায় ট্যাবলেট আকারে ওষুধ তৈরি করা তুলনামূলকভাবে সস্তা হতে পারে, যা রোগীদের জন্য চিকিৎসার খরচ কমাতে সাহায্য করবে।
এছাড়া, যারা ইনজেকশন নিতে ভয় পান, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
এলি লিলি কর্তৃপক্ষের মতে, তারা খুব শীঘ্রই ওজন কমানোর জন্য এই ওষুধের অনুমোদন চাইবে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য আবেদন করার পরিকল্পনা করছে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। নতুন এই ওষুধটি বাজারে আসলে, তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা-পদ্ধতি হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন