যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (Department of Health and Human Services – HHS)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর বিলুপ্ত করেছে। এই দপ্তরটি ফেডারেল দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণের দায়িত্বে ছিল।
এর ফলে, দেশটির প্রায় আট কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য সহায়তা এবং অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক সুযোগ-সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই দপ্তরটি মূলত HHS-এর পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন বিষয়ক সহকারী সচিবের কার্যালয়ের (Office of the Assistant Secretary for Planning and Evaluation – ASPE) অধীনে কাজ করত। এখানে কর্মরত ছিলেন একদল বিশেষজ্ঞ, যারা দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণের কারিগরি দিকগুলো দেখাশোনা করতেন।
জানা গেছে, দপ্তরটি বন্ধ করার সময় কর্মীদের কোনো পূর্ব সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। তাঁদের চাকরিচ্যুতির প্রক্রিয়াটি ‘রিডাকশন ইন ফোর্স’ (Reduction in Force – RIF) বা কর্মী ছাঁটাই হিসেবে পরিচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারি সহায়তা কমে যেতে পারে। কারণ, দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণের ফলে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীর যোগ্যতা নির্ধারিত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, মেডিকেড (Medicaid), খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি (Food Assistance Program), শিশু পরিচর্যা এবং অন্যান্য জরুরি সেবার জন্য এই সীমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ নিয়ম ও গণনা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এই কাজটি মূলত করতেন ক্যান্ডাল সোয়েনসন (Kendall Swenson)।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ক কাজ করেছেন এবং এই বিষয়ে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল। কর্মীদের বরখাস্ত করার ফলে, এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি এখন কে করবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনে, প্রতি বছর আদমশুমারি ব্যুরোর (Census Bureau) দারিদ্র্যসীমার হিসাব অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করে একটি নতুন গাইডলাইন তৈরি করতে হয় HHS-কে। এই গাইডলাইন অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও রাজ্য সরকারগুলি বিভিন্ন সহায়তা প্রদানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এর ফলে দরিদ্র পরিবারগুলির জন্য বরাদ্দকৃত সুযোগ-সুবিধা কমে যেতে পারে। এমনকি, এই সিদ্ধান্তের কারণে দরিদ্র মানুষেরা আইনি জটিলতাতেও পড়তে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা :
যুক্তরাষ্ট্রে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মেডিকেড, যা স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা প্রদান করে।
খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি (সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্টেন্স প্রোগ্রাম বা SNAP) দরিদ্র পরিবারগুলোকে খাদ্য ক্রয়ে সহায়তা করে। এছাড়াও, শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য রয়েছে বিশেষ কর্মসূচি।
প্রসঙ্গত, এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের জন্যও শিক্ষণীয় হতে পারে। আমাদের দেশেও দরিদ্র মানুষের জন্য বিভিন্ন সরকারি সহায়তা কর্মসূচি রয়েছে।
দরিদ্রসীমা নির্ধারণ এবং সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: CNN